শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: সৌভিক ঘোষ: সিওয়ান থানার সামনেই হাজারো মানুষের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন তারা রানী শ্রীবাস্তব। হঠাৎই শুরু হয় গুলিবর্ষণ। গুলিবিদ্ধ হন তারা রানীর স্বামী। স্বামীর ক্ষতে ব্যান্ডেজ বেঁধে তাঁকে বসিয়ে রেখে সহযোদ্ধাদের সাথে ফের আগুন ঝরানো পথে আগুয়ান হন তারা রানী। যখন ফেরেন ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্বামীর। স্বামীর মৃত্যু তাঁকে আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তোলে। তিনি নিজেও শহীদ হন প্রবল ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে অসম সংগ্রামে।
১৯২৫ সালের ৬ আগস্ট। প্রাক কাকোরি পর্ব। গভীর রাতে তিন বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে বিপ্লবীদের অস্ত্র সরবরাহ করতে গেছিলেন এক সিংহহৃদয়ের মহিলা। তিনি ও তাঁর স্বামী ছিলেন চন্দ্রশেখর আজাদের অনুগামী। অভীষ্ট লক্ষ্যে সফলও হন তিনি। কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র বিপ্লবীদের গোপন স্থানে পৌঁছে দেওয়ার পর ফেরার পথে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাঁকে। কারাদন্ড হয় বেশ কয়েকবছরের। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঢুকতে দেননি তাঁকে বাড়িতে। মহিয়সী মহিলাটির নাম রাজকুমারী গুপ্ত। কি নিদারুণ ট্র্যাজেডি না !
১৯২৩ সাল। মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে বিদেশ থেকে ফিরে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়। আদতে কন্নড় হলেও বিয়ে করেছিলেন এক বাঙালিকে। তারপরে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতা আন্দোলনে। নাটক, হস্তশিল্প, ভারতীয় পণ্য তৈরি সবকিছুর মধ্য দিয়ে মহিলাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান কমলাদেবী। ১৯২৬ সালে তৈরি করে ফেলেন অল-ইন্ডিয়া উমেনস কনফারেন্স। তিনিই প্রথম মহিলা ছিলেন যিনি বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছেন। সামান্য ভোটে পরাজিত হলেও নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করেন কমলাদেবী। ১৯৩০ সালে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে ঢুকে দেশীয় লবন বিক্রি করার অভিযোগে গ্রেফতার হন ব্রিটিশের হাতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কমলাদেবীই ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
বিরুদ্ধতার তীব্র স্রোতে ভেসে তীব্র স্বাধীনতা স্পৃহায় নিরাপদ জীবন ছেড়ে অগ্নিযুগে প্রবল প্রতাপান্বিত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিলেন অসংখ্য মহিলা।কমলাদেবী , রাজকুমারীগুপ্ত দের মতো ইতিহাসে বিস্তৃত হয়েও তাঁরা থেকে গেছেন স্বাধীনতা প্রাপ্তির জীবন্ত দলিলে। অমরত্বের প্রত্যাশায় নয় বরং পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের একনিষ্ঠ যোদ্ধা হয়েই।
ইতিহাসে বিস্তৃত এমনই অবিস্মরণীয়সব সংগ্রামীদের সাথে আভূমি প্রণাম জানাই প্রত্যেক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। আজকের ভারত তাদের ভারত। আজকের স্বাধীনতা তাদেরই দান করা।
Leave Comments