শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: অজানা মঙ্গলকে জানার চেষ্টায় পৃথিবীবাসী আজ নীল গ্রহ থেকে প্রায় ২২৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের এক লাল গ্রহের অভ্যন্তরের নতুন নতুন সন্ধানের খোঁজ করে চলেছে। এই কার্যের মুখ্য ভূমিকায় আছে অবশ্যই একটি রোবট। এই গাড়ি সদৃশ রোবটটির নাম কিউরিওসিটি, যা নাসার মঙ্গল অভিযানের জন্য তৈরি করা হয়। ২০১২ এর অগাস্টে মঙ্গল অবতরণের পর দীর্ঘ দিন বহু নতুন নতুন তথ্য এনে দিয়েছে নীল গ্রহবাসীদের সামনে। এবারও নতুন কিছু খোঁজের সন্ধানে কিউরিওসিটি উপস্থিত হয়েছে মঙ্গলের এমন এক স্থলভূমিতে যা লাল গ্রহের জলবায়ুর ইতিহাস দেখাতে সাহায্য করবে।
পূর্বেই নাসার এই রোভার যানটি দীর্ঘ ১৫৪ কিলোমিটার চওড়া গ্যাল ক্রেটারে নেমে প্রমাণ দিয়েছে এই অঞ্চলে কয়েক বিলিয়ন বছর আগে বাসযোগ্য স্থান এবং নদী বা হ্রদের উপস্থিতির সম্ভাবনার কথা। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসেই কিউরিওসিটি রোভারটি মঙ্গলের মাউন্ট শার্পের গোড়ায় এসে পৌঁছায়। এবং গ্যালের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৮কিলোমিটার উচ্চতা আরোহণ করে। রোভারটি মাউন্ট শার্পের পাদদেশে গ্যালের হ্রদ সৃষ্টির ইতিহাস খুঁজছে। এবং এখনো অবধি প্রায় ১৬ মাইল পথ অতিক্রম করেছে মঙ্গলের বুকে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন শিলাস্তর পরীক্ষার মাধ্যমে মঙ্গলের পৃষ্ঠে উপস্থিত হৃদগুলি কিভাবে শুকিয়ে আজকের অবস্থায় পরিণত হয়েছে তার হদিশ খুঁজে নাসাকে তথ্য পাঠাচ্ছে।
কিউরিওসিটির সম্প্রতি পাঠানো একটি ভিডিওতে মঙ্গলের বুকে ধূসর বালির এক মরুভূমি দেখা যায়। যা দেখে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন এই ধূসর বালি সমৃদ্ধ অঞ্চলটি আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপত্তি আগ্নেয়শিলা ক্ষয়ে তৈরি হয়েছে সুদীর্ঘ সময়কাল ধরে। একই সঙ্গে এই ধূসর মরুভূমিতে থাকা অসংখ্য ঢেউ-এর আকার গুলি প্রমাণ দেয় একসময় মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতির কথা। কারন বায়ুপ্রবাহের ফলেই বালিস্তরে এইরূপ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।
এই বিষয় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির কিউরিওসিটি প্রজেক্টের বিজ্ঞানী এবিগেল ফ্রেম্যান জানান, ‘আমরা গত কয়েক বছর যাবৎ এখানের হ্রদের মধ্যে তৈরি কাদামাটি সমৃদ্ধ শিলাগুলিকে খতিয়ে দেখছি। কিন্তু এখন রোভার এমন একটি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে যেখানে পাথরগুলি সালফেট নামক লবণাক্ত খনিজ দ্বারা সমৃদ্ধ।’ ফ্রেম্যান আরও বলেন, ‘এই খনিজ শিলাগুলি শুষ্ক পরিবেশে তৈরি হয়, তাই আমরা মনে করি এই অঞ্চলটি আমাদের প্রাচীন মঙ্গলের জলবায়ুর পরিবর্তনের ধাপগুলি বুঝতে সাহায্য করবে।’ তিনি জানান, ‘মঙ্গলে জীবন থাকার অনুকূল পরিস্থিতিগুলি কতদিন স্থায়ী হয়েছিল আমরা সেটা খুঁজে বার করতে উন্মুখ।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিউরিওসিটি ছাড়াও মঙ্গলের পৃষ্ঠে নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার ২০১৮ তে মঙ্গলে অবতরণের পর থেকেই লালগ্রহের মাটিতে ভূমিকম্পের তারতম্যের উপর নজর রাখছে। তাছাড়াও নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার লাল গ্রহের মাটিতে অতীতে কোনো জীবনের লক্ষণ ছিল কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে, এবং বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে আজও তথ্য প্রেরণ করছে বিজ্ঞানীদের।
সম্প্রতি নাসার এই ছয় চাকার রোভারটি ৩২তম শিলার নমুনা খনন করে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাঠায় নাসাকে। যা থেকে এই মিশনের গবেষকরা অতীতের মঙ্গলের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে আজকের এই শুষ্ক পরিবেশে রূপান্তরের কারণ জানতে পারবেন। এই মিশনের সদস্যরা জানান যে, রোভারটি নিউক্লিয়ার শক্তির মাধ্যমে নূন্যতম ১৪ বছর অবধি সচল থাকতে পারবে। ফলে তাঁরা আশাবাদী যে কিউরিওসিটি আরও বেশ কিছু সময় ধরে মাউন্ট শার্পের উপরে উঠতে পারবে এবং মঙ্গলের অতীত জানতে প্রয়োজনীয় আরও নতুন তথ্য বিজ্ঞানীদের দিতে পারবে।
Leave Comments