শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম আমরা সকলেই জানি। তবে তাঁর সমকালীন আরও একজন মহিলা ডাক্তারের কথা আমাদের অনেকেরই অজানা। যমুনা যোশী। ১৮৬৫ সালের, ৩১ মার্চ তাঁর জন্ম হয় মহারাষ্ট্রের কল্যাণে। মাত্র নয় বছর বয়সে তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর থেকে ২০ বছরের বড়, গোপাল রাওয়ের সঙ্গে। বিয়ের পর তাঁর স্বামী তাঁকে নাম দেন ‘আনন্দী’। বিয়ের পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ১৪ বছর বয়সে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন আনন্দী। তবে, মাতৃত্বের সুখ বেশিদিন ভোগ করা হয়নি তাঁর। মা হওয়ার ১০ দিনের মাথাতেই সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা যায় তাঁর সন্তান।
আনন্দী যোশীর চিকিৎসক হওয়ার লড়াইটা শুরু এরপর থেকেই। শুধুমাত্র চিকিৎসার অভাবে, সন্তানের মৃত্যুশোক মেনে নিতে পারেননি তিনি। সে কারণেই সিদ্ধান্ত নেন নিজেই চিকিৎসক হবেন তিনি। এই সিদ্ধান্তে তাঁকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন তাঁর স্বামী। প্রথমে কলকাতার এক মিশনারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে ইংরেজী ও সংস্কৃত বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন তিনি। এরপর তিনি বিদেশে ডাক্তারি পড়তে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করায়, তাঁর স্বামী আমেরিকার ‘রয়্যাল ওয়াইল্ডার’ মিশনারি স্কুলে স্ত্রীর ইচ্ছের কথা জানিয়ে চিঠি পাঠান। এই চিঠি গিয়ে পৌঁছায় নিউ জার্সির বাসিন্দা থিওডিসিয়া কারপেন্টারের কাছে। আনন্দইবাই যোশীর পড়ার প্রতি এই আগ্রহ দেখে আপ্লুত হন তিনি এবং আনন্দিবাইকে নিজের কাছে ডেকে নেন।
এই সময় আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর শারীরিক অসুস্থতা। জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় কাহিল হয়ে পড়েন তিনি। একথা জানতে পেরে, আমেরিকা থেকে বিভিন্ন ঔষধ পাঠাতে শুরু করেন থিওডিসিয়া। তাতেও অবস্থার কোনও উন্নতি না হলে আনন্দিবাইকে ডাক্তারি পড়া শুরুর জন্যে তাঁকে আমেরিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁর স্বামী। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে বাধ সাধেন তৎকালীন সমাজের কিছু মানুষ। কিন্তু এত সহজে হার মেনে নেওয়ার পাত্রী ছিলেন না আনন্দীবাই। শ্রীরামপুর কলেজের এক সভায়, মহিলা চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তৃতা দেন তিনি। এই বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হন সভায় উপস্থিত সকলে। অবশেষে ১৮৮৩ সালের, জুন মাসে নিউ ইয়র্কে থিওডিসিয়ার কাছে পৌঁছান আনন্দী। ১৯ বছর বয়সে শুরু হয় তাঁর ডাক্তারি পড়া। এরইমাঝে তাঁর জীবন অন্য এক বাঁক নেয়, যক্ষ্মারোগ ধরে পড়ে তাঁর। তা সত্ত্বেও ১৮৮৬ সালে ডাক্তারি পাশ করেন তিনি, এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন ২১ বছর বয়সে। এই সাফল্যের পর রাণী ভিক্টোরিয়া নিজে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়ে চিঠি পাঠান তাঁকে।
দেশে ফেরার পর, বাল গঙ্গাধর তিলক পুরস্কার স্বরূপ একশো টাকা ও একটি চিঠি পাঠান ভারতের প্রথম বিলেত ফেরত চিকিৎসককে। এরপর কোলাপুরের অ্যালবার্ট এডওয়ার্ড হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত করা হয় আনন্দী গোপাল যোশীকে। এর দু তিনমাস পরেই, ১৮৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২১ বছর বয়সে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
মৃত্যুর পর, তাঁর জীবনী নিয়ে একটি হিন্দি ধারাবাহিক পরিচালনা করেছিলেন পরিচালক কমলাকর সারং। দূরদর্শনে দেখান হয়েছিল এই ধারাবাহিক। এছাড়াও পরবর্তীকালে মারাঠী ভাষায় তাঁর জীবন লেখা হয় এবং ‘আনন্দী গোপাল’ নামে একটি ছায়াছবিও নির্মাণ করা হয়।
Leave Comments