প্রতিবেদনে - রাহুল সাহা : শীর্ষ টাইম ডেক্স: যাকে বলে বিষে বিষক্ষয়। একটা সময় বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল করোনা ভাইরাস। কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। শতাব্দীর অভিশাপ সার্স কোভ-২এর ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্য প্রমাণ করল টিউমার থেকে ক্যানসার প্রতিরোধে বিশল্যকরনী হিসেবে কাজ করে করোনা ভাইরাস।
শতকরা ৭০ ভাগ ক্যানসার আক্রান্ত টিউমারকে ধ্বংস করছে। লন্ডনের “নর্থ ওয়েস্টার্ন মেডিসিন ক্যানিং থোরাসিক ইন্সটিটিউট” এহেন গবেষণায় অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্ব খ্যাত ‘জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন’-এর নভেম্বর সংখ্যায়। জার্নালের তথ্য বলছে, যেসব টিউমার থেকে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল সেইসব রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা বিস্ময়করভাবে বাড়িয়ে দেয় করোনা ভাইরাস। ফলত ইউরোপের দেশগুলিতে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের টিউমারকে নিস্ক্রিয় করতে এই নতুন থেরাপি দিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও শুরু হয়েছে। গবেষণার তথ্য বলছে স্তন, লিভার, ফুসফুস, কোলন এবং ম্যালানোমা ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজ করে করোনা।
গবেষণার তথ্য বলছে, কোভিড অতিমারী আবহে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে এটা যেমন সত্যি তেমন অসংখ্য ক্যানসার আক্রান্ত রোগী দিব্বি ভালো আছেন। ‘নর্থ ওয়েস্টার্ন মেডিসিন ক্যানিং থোরাসিক ইন্সটিটিউটে’র বেশ কয়েকজন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসের মিউটেশন নিয়ে সেই সময় থেকে গবেষণা করছিলেন। সেই সময়ে তাঁরা বিষয়টি লক্ষ্য করেন। সেই সময়ে বিষয়টি চোখ এড়িয়ে গেলেও বিগত কয়েক বছরে টিউমার থেকে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের করোনা পজিটিভ কেস স্টাডি করার সময় বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ঘটনাচক্রে নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালযের থোরাসিক সার্জারির গবেষক অধ্যাপক এক ভারতীয়, ডা. অঙ্কিত ভরত। তাঁর ব্যাখ্যায়,” রোগীরা এতটাই অসুস্থ ছিল যে প্রথমে বিষয়টি বুঝতেই পারিনি। কিন্তু করোনা মুক্ত হওয়ার পর থেকে তাঁদের অন্য উপসর্গ কমতে শুরু করে।”
স্বাভাবিকভাবে আগ্রহ বাড়ল। গবেষকরা দেখলেন কোভিড-১৯ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতেই আরএনএ অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। গুণিতক হারে ভাইরাস যেমন বাড়তে থাকে একই সঙ্গে ক্যানসার আক্রান্ত টিউমারকে ধ্বংস করতে শুরু করে। ডা. ভরত বলেন, “যে ভাইরাস এই সভ্যতার কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল, সেই কী না সটান ধ্বংশ করে দিচ্ছিল ক্যানসার আক্রান্ত টিউমার। এ এক বিস্ময়কর অনুভূতি। শুধু দেখে গেছি প্রকৃতির এই খেলা!” এই গবেষণা প্রমাণ করে ছেড়েছে। করোনা ভাইরাসের আরএনএ মনোসাইটে বদলে যায়। শুরু করে ক্যানসার কোষগুলিকে নষ্ট করতে। অন্তত ৭০ শতাংশ রোগী ক্যানসার মুক্ত হয়েছেন। মজার ব্যাপার হল, করোনা ভাইরাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা একই গোষ্ঠীর। কিন্তু করোনা ভাইরাসের যে শক্তি তার কাছে বাকিরা দাঁড়াতেই পারেনা। যদিও পুরো বিষয়টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে আছে। কিন্তু কে বলতে পারে আগামী দিনে মারন ভাইরাস দিয়ে আরেক মারণ রোগ নির্মূল করবে তাবৎ দুনিয়ার চিকিৎসকরা।
Leave Comments