প্রতিবেদনে - রাহুল সাহা : শীর্ষ টাইম ডেক্স: ভারতে থেকেই ভারতকে রক্তাক্ত করার ছক! সে কারণেই টার্গেট করা হয়েছিল তরুণ প্রজন্মকে। তাদের মগজধোলাই করতে খোলা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর তার আড়ালেই চলছিল ‘জেহাদের পাঠ’। মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃত দুই জঙ্গিকে জেরা করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, শিমুলিয়া, ধূলিয়ান মডেলে বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে লোন উলফ হামলার ছক কষেছিল তারা।
শুক্রবার এডিজি, দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার এবং এসটিএফের আইজি গৌরব শর্মা ভবানীভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন। তাঁরা অসম পুলিশের ‘অপারেশন প্রঘাত’-এর কথা উল্লেখ করেন। সম্প্রতি গোপন সূত্রে অসম পুলিশের এসটিএফের কাছে খবর পৌঁছয়, অশান্ত বাংলাদেশ থেকে নাশকতা চালাতে বেশ কয়েকজন জঙ্গি ভারতে ঢুকেছে। এরপরই ‘অপারেশন প্রঘাত’ শুরু হয়। বাংলা, কেরল এবং অসমে অভিযান চালায় অসম পুলিশের এসটিএফ। জালে ধরা পড়ে ৮ জঙ্গি। বাংলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জঙ্গি সন্দেহে মুর্শিদাবাদ থেকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয় আব্বাস আলি এবং মিনারুল শেখকে।
তদন্তকারীরা জানান, আব্বাস আলি বাংলাদেশে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয়। বছরখানেক আগে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার নিশ্চিন্তপুরের এসে ঘাঁটি গাড়ে। মিনারুল পেশায় মিস্ত্রি। বারুইপাড়া এলাকায় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল আব্বাস। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ‘স্যর’ বলে জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। অন্ততপক্ষে ১৪ কিশোরকে পড়াত সে। তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, আদতে ‘জেহাদের পাঠ’ দিত আব্বাস। আনসারুল্লা বাংলার প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানির লেখা বই পড়ানো হত তাদের। ওই বইগুলির মূল বিষয়বস্তু বিধর্মীদের কোতল, জেহাদের পাঠ, শরিয়তের বিধান। তার মাধ্যমে মগজধোলাই করা হত কিশোরদের।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে শিমুলিয়া ও ধূলিয়ান মডেল সামনে আসে। সেক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে জেহাদের পাঠ দেওয়া হত। অস্ত্র প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। বাংলাদেশের জেএমবি জঙ্গিদের মদতে চলগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি। এক্ষেত্রেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মগজধোলাই করা কিশোরদের দিয়ে রাজ্যে ‘লোন উলফ’ হামলার ছক কষা হয়।
কিন্তু কী এই ‘লোন উলফ’? ‘লোন উলফ’ মানে একাকী শিকারি। এই পদ্ধতিতে কোনও ব্যক্তি বিশেষকে মগজধোলাই করে একা আত্মঘাতী হামলা চালাতে উৎসাহী করে তোলা হয়। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির সরাসরি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে কোনও যোগ থাকে না। ইন্টারনেট বা জেহাদি বইপত্রের মাধ্যমে তার মধ্যে পরোক্ষে ধর্মীয় উন্মাদনা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, লোন উলফ হামলাকারীকে খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সূত্রের খবর, বড়সড় নাশকতা ঘটানোর পর বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার ছক ছিল আব্বাসের। ফলে তার ‘শিষ্য’রা জঙ্গি কার্যকলাপে ধরা পড়লেও সংগঠনের ‘উঁচুস্তরে’র নেতাদের গায়ে কোনও আঁচ লাগত না। শুধু তাই নয়, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে অন্যান্য প্রমাণ লোপাট করার ছকও ছিল।
কারণ, জঙ্গি সংগঠনগুলির উপর নিয়মিত নজর রাখেন গোয়েন্দারা। তবে নিজের বাড়িতে বসে ইন্টারনেটে জেহাদি ওয়েবসাইট দেখে কেউ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করলে তা রুখে দেওয়া খুব কঠিন। জানা গিয়েছে, হিন্দুত্ববাদী নেতা, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কর্তা, বড় ব্যবসায়ী ও বেশ কিছু নামজাদা ব্যক্তিদের উপর ‘লোন উলফ’ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে আল কায়দা। আর এই হামলার জন্য বাংলাদেশের ইসলামি ধর্মগুরুদের মদত নিচ্ছে সংগঠনটি। বাংলাদেশে আল কায়দার নেতারা তারই মধ্যে সেখানকার ইসলামি গুরুদের সঙ্গে আলোচনা সেরে ফেলেছে। ভারতে ‘লোন উলফ’ হামলার দ্রুত ছক কষা হয়েছে। এই নৃশংস হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে নেপথ্যে পাকিস্তানি মদতও রয়েছে।
Leave Comments