দেবযানী দত্ত : মুটিয়ে যাওয়াটা আজকাল পছন্দ করেন না অনেকেই। একটু ওজন বাড়লেই ডায়েটিং শুরু করেন। হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন জিম-এ। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই আধবোজা চোখে রওয়না দেন মর্নিং ওয়াকে। এই স্বাস্থ্যসচেতনতার সুফলও পাচ্ছেন অনেকে। ওজন কমিয়ে রীতিমতো ঝরঝরে হয়ে উঠছেন প্রচুর মানুষ।
কিন্ত যখন এই স্বাস্থ্যসচেতনতা একটা ম্যানিয়াতে পরিণত হয় তখন তা উল্টে বয়ে আনে সমূহ ক্ষতি।
জানেন কি এই মোটা হওয়ার ভয় বা ফোবিয়াকে কোন শব্দের দ্বারা বোঝানো হয়?
ইংরাজি শব্দ 'Obesophobia' (ওবেসোফোবিয়া) এই রোগের নাম বলা যেতে পারে। এটা এক ধরনের অ্যানসাইটি ডিসর্ডার। পেশেন্ট লাগাতার মনে করতে থাকেন তাঁর ওজন বেড়ে যাচ্ছে বা তিনি মোটা হয়ে যাচ্ছেন। আর সেই ভয় এমনই চেপে বসে যে তাঁরা অপ্রয়োজনীয় হলেও শক্ত ডায়েট চালিয়ে যেতে থাকেন। এর ফলবশত দেখা দিতে পারে ইটিং ডিসর্ডার। অতিরিক্ত খাওয়া ছাড়াও অতি অল্প খাওয়া, টাইমে না খাওয়া, খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া, মিল স্কিপ করা, যে কোনও খাবারের প্রতিই অরুচি এ সবই ইটিং ডিসর্ডার হওয়ার কারণ। এই ডিসর্ডার অনেকের মাথায় এমন চেপে বসে যে একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেলে ইচ্ছাকৃত বমি করে উগরে দেন তাঁরা সেই খাবারও! এসব বেশিদিন চলতে থাকলেই শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে বাসা বাঁধে নানান রোগ। ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম সহ নানান জরুরি নিউট্রিয়েন্টসের অভাবে মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করে পেশির ওপরে। ফলে ত্বকে চলে আসে অকাল বার্ধক্য। ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটি র মতো মানসিক সমস্যা তো লেগেই থাকে। এছাড়া ক্লান্তি, দ্রুত অবসাদ, চুল উঠে যাওয়া, অত্যন্ত শীর্ণতা দেখা যায়।
এখনও অব্দি ইটিং ডিসঅর্ডার বা ওবেসোফোবিয়া কোনও রোগ নিয়েই তেমন আলোচনা না হলেও পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানের যুব সমাজের একটা বড় পার্সেন্টেজ এই রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে টিনেজারদের মধ্যে এই অসুখ ছড়াচ্ছে দ্রুত। যেটা মা বাবা দের কাছে বেশ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চিকিৎসা : আমাদের সমাজে মনোরোগকে আড়াল করার চেষ্টা সবসময়েই করা হয়। কিন্ত আমরা ভুলে যাই মন সুস্থ থাকলে তবেই শরীর সুস্থ থাকে। তাই মনোরোগকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। বাকি ফোবিয়ার মতো ওবেসোফোবিয়াও যেহেতু মনের অসুখ, তাই আমাদের অবশ্যই উচিৎ একজন অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্ট কনসাল্ট করা।
সুস্থ,পরিমিত ডায়েটের মধ্যে দিয়েও যে বডি ওয়েট কমানো সম্ভব তা সম্পর্কে রোগীকে অবহিত করানো। এবং একজন ডায়েটেশিয়ান দ্বারা তার ফুড চার্ট প্রিপেয়ার করে দেওয়া।
তাকে মানসিক ভাবে বুলি হওয়া থেকে বাঁচানো। বিশেষত একটু ওভারওয়েট টিনেজারদের স্কুলে সহপাঠীদের দ্বারা এরকম মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। পেরেন্টসরা অবশ্যই এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
অমুক মডেল, তমুক নায়িকাকে দেখে তার মতো হতে চাওয়া বা ম্যাগাজিনের পাতায় তন্নীকে দেখে হিংসে হওয়া অল্প বয়সে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্ত এটা কিছুতেই যেন অবসেশনের পর্যায়ে না চলে যায় সেটা খেয়াল রাখা জরুরি।
সঠিক খাবার, এক্সসারসাইজ আর পজিটিভ থিংকিং-এর মাধ্যমে সুস্থ ওজন পাওয়া সম্ভব। তাড়াহুড়ো নয়, সঠিক পদ্ধতি আর ধৈর্যই পৌঁছে দিতে পারে সেই গন্তব্যে।
ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত
Leave Comments