দেবযানী দত্ত : একজন পরমা সুন্দরী নারী। যাকে দেখলেই যে কোনও পুরুষের হৃদয়ে উঠবে ঝড়। কিন্ত সেই সুন্দরীর ছোঁয়ায় যে লেখা রয়েছে পুরুষটির নির্মম পরিণতি! সুন্দরী নারীটিকে গ্রহণ করা মাত্র তীব্র বিষের জ্বালায় মৃত্যু হবে পুরুষটির! এমন বিষকন্যাদের বহু কাহিনী কথা কিন্ত লেখা রয়েছে ভারতের ইতিহাসে। এই বিষকন্যারা আসলে হতেন কোনও না কোনও রাজার নারী গুপ্তচর! চলে ফিরে বেড়ানো এক একটি অস্ত্রের মতন। কিন্ত কীভাবে সাধারণ সুন্দরী কন্যাদের ট্রেনিং হত? কীভাবে তৈরী হত তারা বিষকন্যা?
প্রাচীন ভারতে রাজারা প্রচুর অর্থব্যয় করে তৈরী করতেন বিষকন্যাদের। নগরের বেশ্যালয়ের ওপরেই সাধারণত এই ভার ন্যস্ত থাকত। ছোট ছোট মেয়েদের লুঠ করে এনে বড় করা হত কোনও পতিতার দেখভালে। তাদের খাবারে ছোটবেলা থেকেই মেশানো হত নির্দিষ্ট পরিমাণ বিষ! যাতে তাদের শরীর বয়সের সাথে সাথে সয়ে নিতে পারে বিষের প্রভাব। এই কাজ করতে গিয়ে অর্ধেকের বেশি মেয়ে প্রাণ হারাত। আর যাদের শরীর বিষের প্রভাব সয়ে নিত তাদের প্রস্তুত করা হত পরবর্তী ট্রেনিং-এর জন্য। নাচ, গানে পারদর্শী করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষকে নারীসুলভ কামোত্তেজক ছলাকলায় ভোলানোর জন্য পারঙ্গম করে তোলা হত।
এ সমস্ত কাজ এতটাই গোপনীয়তার সঙ্গে করা হত যে কাকপক্ষীতেও টের পেত না। প্রশিক্ষণ শেষে রাজা ওই মেয়েদের নিজের খাসমহলে নিয়ে গিয়ে রাখতেন। আর প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতেন নিজের সুবিধার্থে।
রাজার রাজত্ব যদি কোনও কারণে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ত তাহলে এই বিষকন্যাদের রাজা অনেকসময় পাঠাতেন শত্রুপক্ষের কাছে। সেখানে বিষকন্যাদের রূপে যেই মোহিত হয়ে পড়তেন কোনও শত্রু রাজপুরুষ, তখনই শুরু হত রাজনীতির সেই নৃশংস খেলা। প্রথমেই বিষকন্যারা সেই পুরুষের খাদ্যে বা পানীয়তে মিশিয়ে দিতেন বিষ। সেই পুরুষের বিশ্বাস আনার জন্য আগে নিজেও খেতেন তা। যেহেতু ছোট থেকেই বিষ পান করে শরীরে প্রতিষেধক তৈরী হয়ে গিয়েছে তাই বিষকন্যার শরীরে খাদ্য-পানীয়তে মেশানো বিষ কোনও কাজই করত না। আর এই খাদ্যের বিষক্রিয়ায় অতি সহজেই মৃত্যু হত পুরুষটির। এভাবেই পথের কাঁটা নিকেশ করতে ব্যবহার হত বিষকন্যাদের।
তবে শুধু হত্যাই নয়, অনেক সময় শত্রু পক্ষের সেনাপতি বা মন্ত্রীদের থেকে আগাম স্ট্রাটেজি জেনে নিয়ে যুদ্ধে নিজের রাজাকে সহায়তা করাও ছিল এদের কাজ।
কিন্ত বিষকন্যাদের এই অমানবিক,করুণ জীবনের পরিণতিও কি সবসময় ঠিকঠাক হত? অনেক সময় ধরা পড়ে গিয়ে নির্মম মৃত্যুযন্ত্রণা পেতে হত তাদের। আগুনে পুড়িয়ে মারত, নয়ত শুলে চড়ানো বা মত্ত হাতি দিয়ে মাথা পিষে দেওয়ার মতো কঠিন নিষ্ঠুর শাস্তি দেওয়া হত তাদের।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্ত এই বিষকন্যারা কি আজ আর নেই? একটু খেয়াল করলে দেখবো এঁরা আজও আছে। গুপ্তচর বিভিন্ন রহস্যময়ী নারীরা আজও কোনও না কোনও সংস্থার হয়ে কাজ করছেন। হয়ত ছদ্মবেশে রয়েছেন আমাদেরই আশেপাশে, অসংখ্য মানুষের ভিড়ে মিশে, সাধারণীর মতো।
ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত।
Leave Comments