• India
  • Last Update 11.30 am
  • 29℃ Kolkata, India
news-details
Education

নারী নন পুরুষ ও নন শিখন্ডি, মহাভারতের এক অদ্ভুত চরিত্র শিখন্ডি-র কাহিনী জানেন কি?

ad

শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: বর্তমানে যে পরিমাণে LGBTQ নিয়ে সরব হয়েছে গোটা দেশ, আপনারা শুনলে অবাক হবেন আমাদের মহাকাব্য মহাভারত থেকেই এই কনসেপ্টটা কিন্তু ছিল। LGBTQ হল একটি ছাতা যা ছক ভাঙ্গা মানুষদের জন্য। এই যেমন ধরুন কেউ পুরুষ হয়ে জন্মেছেন কিন্তু একজন নারীর মত জীবন কাটাতে চান, আবার ধরুন কোনও মেয়ে ছেলের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে মেয়ের প্রতি হয়। এরা সবাই ওই এক চাতার তলায়ই বসবাস করেন যাকে LGBTQ বলে। মহাভারতে শিখণ্ডী নামে একটি চরিত্র ছিল। কথিত আছে শিখণ্ডী মেয়ে হয়ে জন্মেছিলেন, কিন্তু তাঁর বাবা রাজা দ্রুপদ তাঁকে পুত্র রূপে বড় করেছিলেন। এক মহিলাকে বিয়েও করেছিলেন তিনি। কিন্তু পুরুষত্বের অভাবে শিখণ্ডীর স্ত্রী তাঁকে পরিত্যাগ করেন। কথিত আছে, এক রাতের জন্য ধার করে পুরুষাঙ্গও পেয়েছিলেন তিনি। মহাভারতের যুদ্ধে ভীষ্মের মৃত্যুর কারণও ছিলেন তিনি।

শিখণ্ডী পাঞ্চাল দেশের রাজা দ্রুপদের কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু জন্মের সময় আকাশবাণী ছিল এবং দ্রুপদ তাঁকে পুত্রের মতো করে বড় করবেন। শিখণ্ডী পুরুষের মতো বেড়ে উঠলেও বাস্তবে ছিলেন মেয়ে। রাজা দ্রুপদ তাঁকে এক নারীর সাথে বিয়ে দেন। শিখণ্ডীর স্ত্রী ঘটনাটি জানতে পেরে তাঁকে ছেড়ে বাবার কাছে চলে যান। এতে শিখণ্ডীর শ্বশুর খুব রেগে গিয়ে, শিখণ্ডীকে হত্যার হুমকি দেন। শ্বশুরের ক্রোধের ভয়ে শিখণ্ডী বনের দিকে ছুটে যান এবং আত্মহত্যা করার মনস্থির করেন। আত্মহত্যা করতে গেলে সেখানে এক যক্ষ হাজির। যক্ষ শিখণ্ডীকে তাঁর নিজের পুরুষাঙ্গ এক রাতের জন্য ধার দেন। এতে ক্ষুব্ধ হলেন যক্ষরাজ। তিনি যক্ষকে অভিশাপ দেন যে শিখণ্ডীর মৃত্যু পর্যন্ত ওই যক্ষ তাঁর লিঙ্গ ফিরে পাবেন না। কথিত আছে , শিখণ্ডীর বর্তমান ঘটনাগুলি তার পূর্ব জন্মের সাথে সম্পর্কিত। আসলে, তিনি পূর্বজন্মে রাজকন্যা ছিলেন। শিখণ্ডী ছিলেন কাশীরাজের কন্যা অম্বা। স্বয়ম্বরের সময় ভীষ্ম তাঁকে অপহরণ করেছিলেন। ভীষ্ম অম্বাকে তাঁর ভাই বিচিত্রবীর্যের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যিনি শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলেন। অম্বা আপত্তি করলে ভীষ্ম তাঁকে ছেড়ে চলে যান। যদিও তারপর অম্বা কাউকে বিয়ে করতে পারেননি।

তিনি ভীষ্মের উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। তাই অম্বা পরশুরামের কাছে সাহায্য চাইলেন। পরশুরাম ভীষ্মের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তারপর অম্বা শিবের পূজা করলেন। শিব তাঁর তপস্যায় খুশি হয়ে বর চাইলেন। অম্বা বলেছিলেন যে তাঁকে এমন বর পেতে হবে যে সে ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠবে। শিব বললেন, এ জন্মে তা সম্ভব নয়, কিন্তু পরের জন্মে তুমি অবশ্যই ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হবে। একথা শুনে অম্বা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ দেন এবং পরবর্তী জীবনে শিখণ্ডী রূপে জন্ম নেন। মহাভারতের যুদ্ধের দশম দিনে অর্জুনের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ শিখণ্ডীকে নিয়ে ভীষ্মের কাছে পৌঁছেছিলেন। ভীষ্ম অস্ত্র নামিয়ে দিলেন। তিনি বলেছিলেন যে শিখণ্ডী একজন মহিলা এবং তিনি কোনও মহিলাকে আক্রমণ করবেন না। শ্রীকৃষ্ণ ভীষ্মকে বললেন, শিখণ্ডী একজন পুরুষের মতো লালিত-পালিত হয়েছেন। তাঁর এখনও পুরুষাঙ্গ রয়েছে, তাহলে তিনি নারী হলেন কীভাবে? তাঁকে নারী বলা ধর্মবিরোধী হবে। কিন্তু ভীষ্ম নিজ সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন এবং আক্রমণ করতে অস্বীকার করেন। এতে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন ও শিখণ্ডীকে ভীষ্মকে আক্রমণ করতে বলেন। অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ মতো কাজ করেন। এবং তাতেই ভীষ্মের মৃত্যু হয়।

 

ছবি: সংগৃহীত 

You can share this post!

Leave Comments