নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী : এখনকার ফেলুদা এবং ব্যোমকেশগামী বাঙালির কাছে 'স্বপনকুমার' তেমন একটা পরিচিত নাম নয়। যারা তাও বা নামটা শুনেছেন অধিকাংশরই স্বপনকুমার একটা বইও হয়ত পড়েননি। এ জেনারেশনের অনেকেই হয়ত সেই সময়ের বয়স্কদের থেকে 'দুহাতে বন্দুক একহাতে টর্চ' মার্কা কিছু পংক্তি শুনে থাকবে যেগুলোর অযৌক্তিকতা হাস্যরসেরই সৃষ্টি করেছে। সেই দীপক চ্যাটার্জি চরিত্রটিকে পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাটা মুখের কথা তো নয়। তবে আশা জাগাচ্ছে হইচই ষ্টুডিওর সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত 'বাদামি হায়নার কবলে' সিনেমার ট্রেলারটি।গতকালই রিলিজ হল "শ্রীস্বপনকুমারের বাদামি হায়নার কবলে" এর ট্রেলার।ছবিটি পরিচালনা করেছেন দেবালয় ভট্টাচার্য।এই ছবিতে দীপক চ্যাটার্জীর ভূমিকায় আছেন আবির চ্যাটার্জী এবং শ্রীস্বপনকুমারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন পরান বন্দোপাধ্যায়। বিশেষ চরিত্রে আছেন শ্রুতি দাস। ছবিটির গত বছরে কালীপুজোর সময় মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, অবশেষে মুক্তির দিন নির্ধারিত হয়েছে ১২ ই জানুয়ারি।
সমরেন্দ্রনাথ পান্ডে ওরফে স্বপনকুমারের গোয়েন্দা চরিত্র দীপক চ্যাটার্জী শহর কলকাতায় ঘটে চলা অদ্ভুত সব রহস্যের সমাধান করে চলে। প্রথম গল্প 'অদৃশ্য সংকেত' প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। স্বপনকুমারের গল্প সাধারণত কোলকাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও রহস্য সমাধান করতে দীপক চ্যাটার্জী কখনো সখনো বিদেশেও যান ।
ছবিটির ট্রেলারে দীপকের চরিত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে সাধারণ দীপক এবং গোয়েন্দা দীপকের মধ্যে একপ্রকার দন্দ্ব কাজ করে। ছবির লেখকের সাথে দীপকের পারস্পরিক দ্বন্দ এবং সম্মিলিত প্রয়াসে শেষমেশ এক গভীর দার্শনিক উপলব্ধিতে পৌঁছনো এবং একত্রে রহস্যর কিনারা করার ব্যাপারটা আন্দাজ করা যাচ্ছে। দীপকের ভাগ্য স্বপনকুমারের হাতে, অতএব, দীপকের লক্ষ্যে পৌঁছতে স্বপনকুমারের সাহায্যের প্রয়োজন, সেটা যেমন সত্যি। অন্তিম লক্ষ্যে পৌঁছতে স্বপনকুমারেরও দীপককে প্রয়োজন সেটাও তেমন সত্যি। সংলাপের অন্তর্জাল এবং ধ্রুপদী বাকচাতুর্য এই ট্রেলারের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে। ট্রেলারে সবজান্তা গোয়েন্দাগিরির প্রতি একপ্রকার তির্যক নির্দেশ আছে। দর্শককে আদ্যপান্ত বোকা প্রতিপন্ন করে যেভাবে আজকাল সিনেমায় দেখানো গোয়েন্দারা অনায়াসে কেস সল্ভ করে ফেলেন, যাদের জীবনে স্বাভাবিক কোন সমস্যা নেই, প্রেম নেই, ব্যর্থতা নেই, ক্রাইসিস নেই, এমন চরিত্র যে দীপক হবে না তার স্পষ্ট আভাস আছে। জীবনের সমস্ত দিকে প্রথম হওয়া গোয়েন্দা চরিত্র দেবালয়ের দীপককুমার হবে না এটাই এই সিনেমার রসায়ন তৈরীর শ্রেষ্ঠ উপাদান বলে মনে হচ্ছে। ট্রেলারে সিনেমাটোগ্রাফি দেখার মত, দেবালয়ের পূর্বের কাজগুলোর মতোই ক্যামেরার ফ্রেম এবং নিখুঁত কমপজিশণের সাক্ষর এই ছবিও হয়ত বহন করতে চলেছে।
এই ছবিকে বলা হচ্ছে পাল্প ফিকশন। সস্তার উড পাল্প থেকে বানানো সস্তার কাগজে স্বাধীনতার আগে এবং পরে যে সস্তামানের গল্প ছাপা হত সেগুলোকেই পাল্প ফিকশন বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ পাল্প ফিকশন কখনোই উন্নতমানের সাহিত্যকর্ম হতে পারে না। স্বপন কুমারের গল্প তেমনই পাল্প ফিকশন জঁর। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন এই পাল্প ফিকশনই শেষ পর্যন্ত বাংলা গোয়েন্দার স্টিরিওটাইপ ভেঙে নতুন দুনিয়ার দরজা খুলবে। এযাবৎ স্বপনকুমারের কুড়িটি বই বেরিয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রহস্য কুহেলিকা সিরিজ, বিশ্বচক্র সিরিজ, কালরূদ্র সিরিজ ইত্যাদি। গোয়েন্দাখোর বাঙালির কাছে স্বপনকুমারের এই তথাকথিত পাল্প ফিকশন কতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে, সেটা কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে।
ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
Leave Comments