নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী : স্টিফেন হকিং, একজন দুর্ধর্ষ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অসম্ভব জটিল তার বৈজ্ঞানিক নীতি এবং অঙ্কসমূহ। জানলে অবাক হবেন যে তার প্রেম ও বৈবাহিক জীবন, কর্মজীবনের থেকে কোনো অংশে কম জটিল না। হকিং এবং তার প্রথম স্ত্রী দুইজনেই দুজনকে চিট করেছেন, এরপর হকিং তাঁর এক নার্সের প্রেমে পড়ে তাকে নিয়ে ঘর ছেড়েছেন।দ্বিতীয় বিবাহে নাকি শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছিলেন! এতো টালমাটাল পরিস্থিতিতেও তিনি তার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার সাথে আপস করেননি এটা ভেবেও অদ্ভুত লাগে।গতকাল,৮ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিন ছিল।আসুন জেনে নিই তাঁর দাম্পত্যজীবনে হকিং কেমন ছিলেন?!
১৯৬২ সাল, একটি পার্টিতে জেন ওয়াইল্ড এর সঙ্গে প্রথমবারের জন্য হকিং এর আলাপ হয়। এর পরের বছরেই হকিং এর মোটর নিউরন রোগ ধরা পরে। তা সত্ত্বেও ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে হকিং এবং জেনের আংটি বদল হয়! ওনাদের বিয়ে হয় ১৪ ই জুলাই ১৯৬৫। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে দুই সন্তান রবার্ট এবং লুসি জন্মান। প্রথম সমস্যা শুরু হয় যখন তাঁদের জীবনে এক তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে। ব্যক্তির নাম জোনাথন হেলিয়ের জোনস। হকিং এর স্ত্রীর সাথে জোনাথনের রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হকিং সব জেনে বুঝেও বাধা দেননি। এরপরে জেন এবং জোনাথন দুইজনেই কেউ কারোর ঘর ভাঙবেন না বলে আলাদা হয়ে যান। তাঁদের সম্পর্ক প্লেটোনিকই থেকে যায়। ইতিমধ্যে হকিং প্রায় সেলিব্রিটি পর্যায়ে উঠে যান। এই সময়তেই দ্বিতীয় সমস্যার সূত্রপাত হয়। হকিং এর শারীরিক অবস্থা বুঝে একাধিক পরিচারিকা রাখা হয়। এদিকে এলাইন মেসন নামের এক পরিচারিকার প্রেমে পড়ে হকিং বাড়ি ছাড়েন। প্রথম স্ত্রীর থেকে ডিভোর্স নেন ১৯৯৫ সালে। ২০০৩ সালে হকিং হঠাৎই খবরের শিরোনামে আসেন। এবারে কোনো বৈজ্ঞানিক কারণে নয়!মেসনের দ্বারা তিনি নাকি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক হেনস্থার শিকার! অন্যান্য নার্সরা পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করেন। পরে হকিং নিজেই অভিযোগ তুলে নেন।মেসনের সাথে হকিং এর নীরবে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ২০০৬ সালে। তখনো অভিযোগ উঠেছিল হকিং নাকি কারোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন, যা তিনি তার মুখপাত্রের দ্বারা অস্বীকার করেন। তার মেয়ে লুসি অভিযোগ জানান মেসন নাকি হকিং এর স্থাবর সম্পত্তি পাবার জন্য যা খুশি তাই করতে পারেন। এতোকিছুর পরেও তার প্রথম স্ত্রীর সাথে পরে সম্পর্কের উন্নতি হয়। তার জীবনের উপরে ভিত্তি করে তৈরী হওয়া সিনেমা "দি থিওরি অব এভরিথিং" এর প্রিমিয়ারেও দুইজন একসাথে ছিলেন। জেনের লেখা "ট্রাভেলিং টু ইনফিনিটি: মাই লাইফ উইথ স্টিফেন" এর উপর ভিত্তি করে তৈরী হয় ছবিটি। হকিং এর মৃত্যুর পরে তার দুই স্ত্রী কোনো বিবৃতি না দিলেও তার সন্তানেরা শোক প্রকাশ করেন। এমন মারণরোগ, টালমাটাল বৈবাহিক জীবনের বাইরেও বিজ্ঞানের জন্য যথেষ্ট সময় বের করে এমন দুরূহ সমস্যার সমাধানে কিভাবে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন স্টিফেন হকিং, ভাবলে অবাক লাগে! আবার এটাও অবাক লাগে ভাবতে এই হকিংই বলেছেন যে "এই পৃথিবী যদি তোমার ভালোবাসার মানুষের ঘর না হতে পারে তাহলে এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কোন লাভ নেই "
ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
Leave Comments