এই মরশুমে খাতায় কলমে শক্তিশালী দল গড়লেও পর পর ৬ ম্যাচ হারার লজ্জার রেকর্ড গড়েছে ইস্টবেঙ্গল। এরই মধ্যে শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এর মুখোমুখি হবে তারা। তাই বড় ম্যাচের আগে দলের ফুটবলারদের উজ্জীবিত করতে বৈঠক করে লাল-হলুদ ম্যানেজমেন্ট। বৈঠক উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার, ক্লাবের সভাপতি সহ ইমামি গোষ্ঠীর কর্তারা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী কোচ বিনো জর্জ সহ গোটা দল। মূলত লাগাতার ৪ ম্যাচ হারের পর খেলোয়াড়রা যাতে মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়েন সেটা নিশ্চিত করার জন্যই বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়। এদিন বিকেলে অনুশীলন শেষে ক্লাব তাঁবুতেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বিনিয়োগকারী সংস্থা ইমামির তরফে হাজির ছিলেন আদিত্য আগরওয়াল, সন্দীপ আগরওয়াল, বিভাস আগরওয়াল আর মণীশ গোয়েঙ্কা।
বৈঠকে শেষে দেবব্রত সরকার বলেন, ‘আমরা এসেছিলাম প্লেয়ারদের এনকারেজ করতে, ওদের সঙ্গে কথা বলতে, দ্যাটস ইট’। এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গলের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে তাদের। ইস্টবেঙ্গল শেষ জয় পেয়েছিল ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বে। এরপর ডুরান্ডের কোয়ার্টার ফাইনাল হোক কিংবা ACL ২-এর যোগ্যতা অর্জন পর্ব বা ISL, সব জায়গায় হারের মুখ দেখতে হয়েছে ক্লেটনদের। তাই এইরকম পরিস্থিতিতে ফুটবলারদের মনোবল তলানিতে থাকবে সেটা আঁচ করতে পেরেছে ক্লাব কর্তারা। মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে নামার আগে আনোয়ারদের তাই কিছুটা ভোকাল টনিক দিয়ে গেলেন নীতু সরকাররা। তাঁরা ভালোভাবেই জানেন, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জয় গোটা দলের চিত্রটাকেই পরিবর্তন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
প্রসঙ্গত, লাগাতার ব্যর্থতার জেরে লাল-হলুদের কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ‘প্রফেসর’ কার্লস কুয়াদ্রাত। তাই শেষ ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে দলের কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বিনো জর্জ। কিন্তু সেই ম্যাচেও পরাজিত হয় ইস্টবেঙ্গল। ভালো খেলেও ক্লেটনের একাধিক গোলের সুযোগ নষ্টের খেসারত দেয় দল। এবার দেখার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচে এই মরশুমের আই এস এল-এর প্রথম জয়টি ছিনিয়ে নিতে পারে কিনা ইস্টবেঙ্গল এফসি। এখনও পর্যন্ত ২০২৪-২৫ আই এস এল মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ৪ ম্যাচ খেলে ২টিতে জয় পেয়েছে, ১টি করে ম্যাচ ড্র করেছে এবং হেরেছে। সব মিলিয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ৪ নম্বরে রয়েছে তারা। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল এখনও ১ পয়েন্ট অর্জন না করতে পারায় লিগ টেবিলে সবার নিচে রয়েছে।
এরই মধ্যে একটি সুখবর পেলেন ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা। ভারতে আসার ভিসা পেয়ে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ অস্কার ব্রুজ়ো। তাঁকে ডার্বির আগেই কলকাতায় আনার চেষ্টা চলছে। তবে ডাগআউটে থাকবেন নাকি ভিআইপি বক্সে থাকবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়।
প্রায় সপ্তাহদুয়েক আগে কোচ হিসাবে ব্রুজ়োর নাম ঘোষণা করা হলেও ভিসা না পাওয়ায় ভারতে আসতে পারছিলেন না ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ। সেই সমস্যা মিটেছে। তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব বিমানে কলকাতায় আনার চেষ্টা চলছে। শুক্রবার মধ্যরাতে তিনি কলকাতায় পা রাখতে পারেন। ব্রুজ়ো এখন অপেক্ষা করছেন বাকি সব দরকারি কাগজপত্রের। তা হলেই কলকাতায় আসতে আর কোনও বাধা থাকবে না তাঁর।
তবে ডার্বিতে তিনি ডাগআউটে থাকবেন কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। কার্লেস কুয়াদ্রাত যাওয়ার পর থেকে এই দলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিনো জর্জ। ডার্বিতেও তিনি কোচের ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু ব্রুজ়ো ডাগআউটে থাকলে তিনিও গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। তাতে ইস্টবেঙ্গল সফল হবে না হিতে বিপরীত হবে এখনই বোঝা যাচ্ছে না। ব্রুজ়ো অভিজ্ঞ কোচ হওয়ায় হয়তো এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে দলের সমস্যা হয়।
টানা চার ম্যাচে হারলেও ডার্বির আগে চনমনে ইস্টবেঙ্গল। সবচেয়ে বেশি নজর আনোয়ার আলির দিকে। পিএসসি-র শুনানি বাতিল হওয়ায় তিনি ডার্বিতে খেলতে পারবেন। তা নিয়ে মোহন-সমর্থকদের আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে আগের দিন অনুশীলন শেষে আনোয়ার বলেছেন, “ডার্বি মানেই চাপ। আমি চেষ্টা করব যতটা সম্ভব চাপমুক্ত থেকে মাঠে নিজের সেরাটা দেওয়ার। জানি আমাদের শুরুটা ভাল হয়নি। তবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জিতে আমরা আইএসএলের প্রথম জয়টা পেতে চাই।”
উলটো দিকে ডার্বির আগে মোহনবাগানে বেশ ফুরফুরে হাওয়া। এ দিন ছিল আপুইয়ার জন্মদিন। মোহনবাগান সমর্থকদের সঙ্গে কেক কাটেন আপুইয়া। গ্রেগ স্টুয়ার্ট আবার প্র্যাক্টিসে এসেছিলেন ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে। বাবার সঙ্গে সে-ও চুটিয়ে মজা উপভোগ করল। বাগানের বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেনও প্রথম ডার্বি খেলার আগে দারুণ মেজাজে রয়েছেন। দুর্গাপুজো থেকে কলকাতার নানা মুড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিচ্ছেন তিনি।
Leave Comments