প্রতিবেদনে - রাহুল সাহা : শীর্ষ টাইম ডেক্স: একি কাণ্ড!
একই রোগী। শরীরে দু ধরনের উপসর্গ। ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া। এমন ঘটনা গত তিন-চার বছরে বেশ কয়েকটি দেখা গিয়েছে। কিন্তু কালীপুজো শেষ না হতেই কলকাতা-সহ রাজ্যের সাতটি জেলায় সাড়াশির মতো আক্রমণ করছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মশা। একই ব্যক্তি সরকারি ফিভার ক্লিনিকে জ্বর গা ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। ডাক্তারবাবু উপসর্গ দেখে ডেঙ্গু টেস্ট করার নিদান দিলেন। পরদিন রিপোর্ট এল ডেঙ্গু। জ্বরের ওষুধ প্যারাসিটামল আর পুরো বিশ্রামের নির্দেশ দিলেন। এবার নতুন উপসর্গ অসহনীয় মাথার যন্ত্রণা। পেট খারাপ। গা বমি। ফের ফিভার ক্লিনিক। এবার ম্যালেরিয়া পরীক্ষা। দেড় ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পজিটিভ। অর্থাৎ একই শরীরে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়ার জোড়া আক্রমণ।
ডা. যোগীরাজ রায়ের কথায়,”এটা নতুন নয়। তবে এবার এমন রোগীর সংখ্যা বেশি। আবার এমনও দেখা গিয়েছে পেট খারাপ। বমি ভাব। এসব কিছুই নেই। কিন্তু অস্বাভাবিক দুর্বল। রক্তের এলিজা টেস্ট করে দেখা গেল ম্যালেরিয়া।” তাঁর কথায়, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের অন্তত ৬টি জেলায় প্রতি দশ রোগীর মধ্যে ৫ জন ডেঙ্গু এবং ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
অবস্থা সামাল দিতে মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফিভার ক্লিনিক চালু হয়েছে। যথেষ্ট পরিমাণে ডেঙ্গুর টেস্ট কিট জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দপ্তর থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। রোজ কত ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া টেস্ট হচ্ছে তার তথ্য পরদিন স্বাস্থ্য দপ্তরের কমিউনিটি মেডিসিন ও পাবলিক হেলথ বিভাগে পাঠাতে হবে। ডেঙ্গুর হট স্পট চিহ্নিত করে ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগে পাঠাতে হবে।
এখন প্রশ্ন ডেঙ্গু না ম্যালেরিয়া কোনটি বেশি মারাত্মক? পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালযের অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, “দুটি মশাবাহিত রোগ। কিন্তু যে রোগ ইমিউনু সপ্রেসিং তার ভয়াবহ মারন ক্ষমতা। ডেঙ্গু প্যারাসাইট। ম্যালেরিয়া ভাইরাল ডিজিজ। বয়স যাই হোক না কেন, কোনও সময়ে ডেঙ্গু মারমুখী হয়, আবার ম্যালেরিয়াতেও মৃত্যু হয়। তাই ডাক্তারবাবু আগে দেখবেন ডেঙ্গু না ম্যালেরিয়া কোনটা রোগীকে বেশি দুর্বল করছে। দরকারে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।” এই প্রসঙ্গে ডা.যোগীরাজ বলেন,”দেখা গিয়েছে দশদিনে ম্যালেরিয়া মুক্ত হয়। কিন্তু ডেঙ্গু বড্ড ভোগায়। রোগ ধরা পড়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্লেটলেট দ্রুত কমতে শুরু করে। এইসময় রোগীকে তীক্ষ্ম নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। রোগীর প্রস্রাব, হাত-পায়ের চামড়া ফেটে রক্ত বের হলে অথবা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।” স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য বলছে রাজে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩৯ হাজার। প্রথমে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। দ্বিতীয় সারিতে মালদহ। তৃতীয় সারিতে উত্তর ২৪ পরগনা।
Leave Comments