প্রতিবেদনে - রাহুল সাহা : শীর্ষ টাইম ডেক্স: ‘দিদি ঘুমোচ্ছে?’ সর্বজয়ার কোলে মৃত দুর্গাকে দেখে এই প্রশ্ন করেছিল ছোট্ট অপু। তার সরল মন মৃত্যুর কঠিন বাস্তব সম্পর্কে কিছুই জানত না। আজ সত্যিই দিদিকে হারালেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ছোট্ট ‘অপু’কে ছেড়ে চলে গেলেন ‘দুর্গা’ উমা দাশগুপ্ত। হ্যাঁ, বয়স হয়েছিল। কিন্তু ভাইয়ের মন যে মানে না। “আরও কিছুদিন থাকলে ভালো হত”, বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
১৯৫০ সালে অপুর চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৫১ সালে ‘পথের পাঁচালী’র শুটিং শুরু হয়েছিল। অপু-দুর্গা হিসেবে সেই উমা দাশগুপ্ত ও সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাত্রা শুরু। ভাই-বোনের যে সম্পর্ক ক্যামেরার সামনে গড়ে উঠেছিল, তা অফস্ক্রিনেও সমানভাবে ছিল। উমা দাশগুপ্তর মৃত্যুসংবাদ পেয়েই কেঁদে ফেললেন তিনি।
অভিনেতার কথায়, “কী আর বলব দুঃখের কথা! এতদিনের ভাই-বোনের সম্পর্ক। ‘পথের পাঁচালী’ শুধু ছবি নয়, ওটা মিরাকল ছিল। আমাদের পারিবারিক জীবনের চালচিত্র। ৫৯ বছর হয়ে গেল। আজও মানুষ মনে রেখেছে। দুর্গা আর আমার এটাই পাওয়া।”
‘পথের পাঁচালী’র বেশিরভাগ শুটিং হয়েছিল আউটডোরে। শুধু একটি যাত্রাপালার সেট ছিল। শুটিংয়ে একেবারে ভাই-বোনের মতোই থাকতেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ও উমা দাশগুপ্ত। অভিনেতার কথায়, “ঠিক যেমন ভাই-বোনের খুনসুটি হয় তেমনই হোতো। আর সেটাই সিনেমায় দেখানো হয়েছে। আমারা ভাইবোনের মতো খেলাধুলো করতাম। মনেই হোতো না ছবি করছি। খুবই আনন্দে থাকতাম। দিদি আমাকে ছাড়া থাকতে পারত না। আমি দিদিকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। একসঙ্গে বসে গল্পগুজব করতাম। রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার স্মৃতি চিরকালের জন্য মনে আছে। “
রেলগাড়ির দৃশ্যটি সারা পৃথিবীর সিনেপ্রেমী মানুষের কাছে আইকনিক একটি দৃশ্যে। তার শুটিং হয়েছিল শক্তিগড়ের পালশিটে। সেই সমস্ত স্মৃতি বারবার মনে পড়ছে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বললেন, “প্রথমে ১৬ মিমি ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছিল। তা ভালো হয়নি। তার পর কাকাবাবু ১৬ মিমি ক্যামেরায় শুটিং করেন। আমাদের প্রথমে কান পেতে ট্রেনের শব্দ শোনার ছিল। তার পর দৌঁড়ে যাওয়া। আমার শ্বশুরবাড়ি দুর্গাপুর। এখনও হাইওয়ে দিয়ে গেলে সেই জায়গাটা দেখতে পাই। সত্যি! স্মৃতি সততই দুঃখের। দিদি আরও কিছুদিন থাকলে ভালো হোতো।”
Leave Comments