দেবযানী দত্ত :পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাদেশ অস্ট্রেলিয়ার চার ভাগের তিন ভাগই মরুভূমি। সুবিশাল ভূমির পূর্ব ভাগেই বেশিরভাগ শহর। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন,এডিলেডের মতো শহর গুলি ছাড়া এই দেশের পশ্চিম ভাগে পার্থ, কার্ণারভন এই শহরগুলি গড়ে উঠেছে ভারত মহাসাগরের কূলে। কিন্ত চারিদিকে জল দিয়ে ঘেরা অস্ট্রেলিয়ার মধ্যভাগ সম্পূর্ণ জনহীন! রয়েছে শুধু বালিয়াড়ি, সেখানে থাকা পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম সরীসৃপরা।
কেন মানুষের বসবাসের অযোগ্য এই দেশের বিস্তীর্ণ মধ্যভাগ?
জানেন কি পৃথিবীর তিনটি বড় বড় মরুভূমির মধ্যে তিনটিই অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার এই মধ্যভাগে! এই বিস্তৃত ভূমিতে বছরে বৃষ্টিপাত কোথাও কোথাও তো গড়ে ১৩ সেমিরও কম! এসব জায়গায় বছরের বেশিরভাগ সময়ে উষ্ণতা পৌঁছায় ৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের আশেপাশে। এত তাপমাত্রা আর রুক্ষতার কারণে প্রায়ই দাবানল লাগে জঙ্গলে। মারা যায় প্রচুর পশু পাখি।
এর আগে ১৯৩৮ সালে পৃথিবী বিখ্যাত সিডনি হারবার ব্রিজের রূপকার স্যার জন ব্র্যাডফিল্ড তৎকালীন সরকারকে একটি যোজনার কথা বলেন। এই ব্র্যাডফিল্ড স্কিম অনুযায়ী উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের তিন নদী টুলি, হারবার্ট আর বুডিকিনকে পাইপ এবং টানেলের মাধ্যমে গতিপথ বদলে মরুভূমির পাশে থাকা থমসন নদীতে এনে ফেলা হবে। আর সেই জলের অতিরিক্ত গিয়ে মিশবে মরুভূমির মধ্যিখানে থাকা লেক ইরিতে। এর ফলে এই লেকের আশেপাশের মরুভূমিতে গজিয়ে উঠবে সবুজ। জলের সুবাদে তৈরি হবে মেঘও, সেই মেঘ থেকে বৃষ্টিপাতে শস্যশ্যামলা হবে রুক্ষ প্রান্তর।কিন্ত বাদ সাধলেন পরিবেশবিদরা। রীতিমতো আশঙ্কা প্রকাশ করে তাঁরা জানালেন এতে নষ্ট হবে ইকোলজি বা বাস্তুতন্ত্র। প্রভাব পড়তে পারে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফেও। আঁতকে ওঠার মতো এই সত্যে পিছু হটলো অস্ট্রেলিয়া সরকার। তখনকার মতো বন্ধ হল এই পরিকল্পনা।
কিন্ত সমস্যা কি মিটল? কখনও ড্রোনের সাহায্যে বীজ ছড়িয়ে, কখনও হেলিকপ্টার থেকে বৃষ্টিপাত করিয়ে চাষবাস সম্ভব হয়েছে বেশ কিছু অঞ্চলে। তৈরি হয়েছে একর একর জায়গা জুড়ে বায়োডাইভারসিটি ফরেস্ট ল্যান্ড। কিন্ত তাতেও এত বছর অতিক্রম করে জলের আকাল থেকে মুক্তি পায় নি অস্ট্রেলিয়া। এখনও বসবাসের অযোগ্য বেশিরভাগ ভূমি। প্রতি বছর লেগেই থাকে খরা। প্রতি ভোটের আগেই রাজনৈতিক দলগুলি ব্র্যাডফোর্ড স্কিমকে সফলতা প্রদান করার আশ্বাস দেয়। এর সাথে জুড়ে যায় দেশপ্রেমের আবেগও। গবেষকরা বলছেন,স্যার ব্র্যাডফিল্ডের এক্ষেত্রে একটা ভুল ছিল। তিনি ওই তিন নদীর জলের পরিমাপ যা করেছিলেন, ওই নদীগুলিতে আদৌ অত জলই নেই। তাই উপচানো জল টানেলের মাধ্যমে বয়ে অনেকদুর যাবে, সেরকমটা সম্ভব নয়। তাই ২০৪৫ এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিকে সবুজ করে দেওয়ার শপথ আদৌ কতটা সত্যি হবে সেটাই দেখার।
ছবি : সংগৃহীত
Leave Comments