• India
  • Last Update 11.30 am
  • 29℃ Kolkata, India
news-details
Education

কয়েক লক্ষ কোটি মূল্যের ধাতুর ঠিকানা সাইকি ১৬

ad

শীর্ষ টাইমস: মহাশূন্যের তারাদের দেশে রয়েছে অসংখ্য অজানা নতুন জগৎ। কোথাও বরফের চাদরে মোড়া, আবার কোথাও জ্বলন্ত অগ্নিদগ্ধ পরিবেশ, আবার কোথাও বা ভয়ানক গ্যাসীয় চাপে এক লহমায় সব শেষ করে দিতে পারে এমন এক নির্দয় জগৎ। কিন্তু এবারে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা খোঁজ দিলেন সম্পূর্ণ অন্যরকম ধাতব সম্পদের সম্ভারে পরিপূর্ণ এক জগতের। না এটা কোনো গ্রহ কিংবা কোনো নক্ষত্র নয়, একটি গ্রহাণু। সূর্য থেকে মাত্র ২.৫ থেকে ৩.৩ অ্যাস্ট্রনমিকাল ইউনিট (১ এইউ অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব) দূরত্বে অবস্থিত এই ১৬ সাইকি গ্রহাণু।

 

১৬ সাইকির প্রথম আবিষ্কার করেন ইতালীয় বিজ্ঞানী আনিবেলে ডি গাস্পারিস, এবং ১৮৫২ সালে ১৭ মার্চ খুঁজে পাওয়ার পর এর নামকরণ করেন সাইকি। সাইকি অর্থাৎ গ্রিসের আত্মার দেবী এবং যার স্বামী ছিলেন প্রেমের দেবতা ইরস।

 

২২৬ কিলোমিটার প্রশস্ত এই গ্রহাণুটির ব্যাস প্রায় চাঁদের এক-ষষ্ঠাংশ ভাগের ব্যসের সমান। সূর্যকে প্রদক্ষিণকারী এই গ্রহাণুর অবস্থান মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝে। প্রায় ৫বছরে সূর্যকে একবার পূর্ণ প্রদক্ষিণ করা সাইকি ১৬ নিজের অক্ষে মাত্র ৪ ঘন্টাতেই একদিন পূর্ণ করে ফেলে। অন্যান্য শিলাময় বরফাবৃত মৃত গ্রহাণু গুলির থেকে এটি নিজেকে অনেকটাই আলাদা স্থান দিয়েছে নিজের ধাতব চরিত্রের দ্বারা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রহাণুর ধাতব কোর-এ রয়েছে বৃহৎ পরিমান লৌহ এবং নিকেলের সম্ভার। এমনকি অন্যান্য ধাতব খনিজের মধ্যে তামা, সোনা, রুপা এবং প্লাটিনামের মতো দামি ধাতুর সম্ভবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।

 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আলু সদৃশ এই গ্রহাণুর ইনফ্রারেড তরঙ্গের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেন। এমনকি তাঁদের মতে সাইকি ১৬ সৃষ্টির পশ্চাদে রয়েছে কোনো গ্রহের জন্মলগ্নের ইতিহাস। তাঁরা এও মনে করছেন এই গ্রহাণুর জন্ম হয়েছে কয়েক বিলিয়ন বছর পূর্বের কোনো এক গ্রহের সৃষ্টিকালীন সংঘর্ষের মাধ্যমে। হয়তো এই সাইকি ১৬-ই আমাদের চেনা পরিচিত কোনো গ্রহের উন্মুক্ত কোরের অংশ হতে পারে যা কিনা হিংসাত্মক সংঘর্ষের ফলে বাহ্যিক ধাতব স্তর হারিয়েই এই গ্রহাণুকে সৃষ্টি করে।

 

নাসার সাইকি ১৬ মিশন ২০২২ এর অগাস্টেই শুরু হতে চলেছে। বিজ্ঞানীরা একটি স্পেসক্রাফট মারফত পর্যবেক্ষণ করে  বহুমুখীদৃশ্যতা সম্পন্ন ছবি, গামা রে, ম্যাগনেটোমিটার এবং নিউট্রন স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে এই গ্রহাণুর ধাতব চরিত্র নিয়ে বিশদে জানতে চাইছেন। স্পেসক্রাফটির সাইকি ১৬ পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে তিন বছর সময়কাল লাগবে অর্থাৎ প্রায় ২০২৬ এর শুরুতেই গন্তব্যে পৌঁছবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য এই গ্রহাণুর একটি ধাতব অংশ তুলে নিয়ে পরীক্ষা করে কোন কোন ধাতুর সম্ভার রয়েছে, এবং এর জন্মের ইতিহাসের খোঁজ করা।

 

চিলির মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি শুধু মাত্র বাহ্যিক পৃষ্ঠেই নয় বরং গ্রহাণুটির ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে ৩০শতাংশই বহুমূল্য ধাতব সম্পদে পরিপূর্ণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশ এখন নাসার অভিযানের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, কারণ এই সাইকি মিশনই নির্ধারণ করতে পারবে এই গ্রহাণুর বয়স পৃথিবীর সমসাময়িক নাকি আরও পুরোনো। এই বিষয় অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিন্ডি ট্যান্টন এর মতে সাইকি ১৬ তে শুধুমাত্র লোহার যা পরিমান রয়েছে তার মূল্যই ১০লক্ষ কোটি ডলারের বেশি, আর অন্যান্য কোনো দামি ধাতুর বিপুল সম্ভারের হদিশ পাওয়া গেলে তা নিশ্চিত ভাবেই এক বিরল খোঁজের দিশারী হবে।

You can share this post!

Leave Comments