শীর্ষ টাইমস: মাত্র পাঁচ লোন! তাও তেমন কোনও আয়ের তথ্য বা মর্ডগেজ বা প্রপার্টির কাগজপত্র না দেখিয়েই! কোম্পানির বয়ান অনুযায়ী মাত্র পাঁচ মিনিটে পেপারলেস লোন, আর সঙ্গে সঙ্গে টাকা ট্রান্সফার! এইরকম বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে নি এরকম মানুষ আজকাল পাওয়া ভার। সবাই এই বিজ্ঞাপন দেখলেও লক্ষ্য যায় তাঁদেরই যাঁদের সত্যিই লোন দরকার এবং এই মুহূর্তেই! আর ঠিক এই সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকে ভুয়ো লোন কোম্পানিগুলো। সাম্প্রতিক অতীতে পুলিশ এরকম বহু কোম্পানির খোঁজ পেয়েছে প্রতারিত মানুষদের অভিযোগের পরে অনুসন্ধানে নেমে। শুধুই কি প্রতারিত? সাথে অত্যাচারিতও তো। এমন ডিগ্রীর মানসিক অত্যাচারের ঘটনা সামনে উঠে এসেছে যাতে লোন গ্রহণকারী আত্মহত্যা করতে অবদি বাধ্য হয়েছেন। কিন্ত ডিজিটাল স্ক্যাম, চিটফান্ড প্রতারণা,ভুয়ো লোন কোম্পানি এইসব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার পরেও মানুষ কীভাবে ফেঁসে যান এই চক্রে? প্রতারকরা কীভাবে পাতেন ফাঁদ?
প্রথমত, এঁরা নিশানা করেন গৃহবধূ, স্টুডেন্ট, আনএমপ্লয়েডদের। ভাবছেন এঁরা কীভাবে এই সবের একসেস পায়? এই কোম্পানিগুলো গুগলে অর্থের বিনিময়ে এদের লিস্টিং করিয়ে রাখে। রেজিস্ট্রেশন নং ও থাকে। থাকে কোম্পানির নিজস্ব সিল, স্ট্যাম্প, ডিরেক্টর, ডিজিটাল সিগনেচার, নিজস্ব এপ্লিকেশন বা মোবাইল অ্যাপ। আপনি যেই সেই অ্যাপ আপনার ফোনে ডাউনলোড করবেন সঙ্গে সঙ্গে সাইন আপ করতে বলবে আপনার ফোন নাম্বার দিয়ে। এরপর পারমিশন চাইবে আপনার কন্ট্যাক্ট, গ্যালারি, মিডিয়া, লোকেশন অ্যাকসেস করার। এরপর চাইবে আপনার প্যান আর আধার কার্ডের নাম্বার এবং সেগুলোর ছবি, ব্যাঙ্ক একাউন্ট নাম্বারও। আপনি অ্যাপে ঢুকে খুব সহজেই ইনস্ট্যান্ট লোন পেয়ে যাবেন বিনা কোনও কাগজ, রোজগারের প্রমাণপত্র বা গ্যারান্টার ছাড়াই। তবে লোন অ্যামাউন্ট এপ্রুভ হবার আগেই এঁরা প্রসেসিং ফি এবং জিএসটি বাবদ বেশ কিছু টাকা কেটে নেবে। হাতে পাবেন মূল অ্যামাউন্টের থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ কেটে বাকিটা। টার্মস এন্ড কন্ডিশনের লেখা এত দীর্ঘ হবে যে খুব কম লোকেই তা পড়ে দেখবেন। হয়ত বা পড়লে দেখা যেত ইন্টারেস্ট রেট এত বেশি, যা লোন নিচ্ছেন তার দ্বিগুণের কাছাকাছি ফেরৎ দিতে হবে তাও মাত্র সাত কি দশদিনের মাথায়। যা সাধারণ ব্যাঙ্ক থেকে নিলে ৬ মাস থেকে লোনের প্রকারভেদ অনুযায়ী ৬ বছর বা তার বেশি সময়েও শোধ করা যায়। ইন্টারেস্ট রেটও সেখানে লোনভেদে ৯% থেকে ২০% এর মধ্যে। তবুও মানুষ এই লোভে পা দেয় শুধুমাত্র চটজলদি লোন পাওয়ার আশায় যেখানে সাধারণ ব্যাঙ্ক লোন এপ্রুভ করতে অন্ততঃ ৬ থেকে ১০ দিন লাগায়। এইসব ভুয়ো কোম্পানি সেখানে দশ থেকে পনের মিনিটে আপনার একাউন্টে টাকা দিয়ে দেয়।
কিন্ত দিন সাতেক পর থেকেই লোন শোধ করার জন্য আপনার কাছে ফোন আসতে থাকবে।প্রথমে ধমকি, গালাগালি এরপর নানান ভাবে ব্ল্যাকমেল চলতে থাকবে। আপনার কন্ট্যাক্ট আর গ্যালারির এক্সেস দিয়ে রেখেছেন আপনি নিজেই, সেখান থেকে আপনার পরিচিতদের কাছে আপনাকে চোর, ফেরেববাজ, ডিফল্টার msg পাঠাবে এঁরা। এতে কাজ না হলে আপনার গ্যালারি থেকে ছবি নিয়ে তা অশ্লীল ছবির সঙ্গে মার্জ করে তা দিয়ে চলবে ব্ল্যাকমেল। এই চাপে পড়ে বহু ক্রেতা নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে যেভাবেই হোক টাকা মিটিয়ে দেন। কেউ কেউ না পেরে বেছে নেন আত্মহত্যার চরম পন্থা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এরকম ঘটনা ঘটতে থাকায় তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে বেশ কয়েকজনকে। উঠে আসে চীনের বেশ কয়েকটা জালিয়াত কোম্পানির নাম। তারা এ দেশের লোকজনদের এ দেশের অফিসগুলোতে বসিয়ে রাখত। তাদের পরিচয়েই রেজিস্ট্রেশন করানো হত কোম্পানির। থাকত কল সেন্টারের কর্মীরা যারা লোন দেবার জন্য ক্রেতার ফোনে ফোন করত। একসময় পরপর আত্মহত্যার জেরে এই ধরপাকড়ের পর এইসব কোম্পানির দাপট কয়েকদিন একটু কমে। কিন্ত সম্প্রতি আবার এই ধরনের কোম্পানিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
কীভাবে চিনবেন ভুয়ো লোন কোম্পানি? :
১. যে কোনও ব্যাঙ্কিং কোম্পানিকেই ভারতে ব্যবসা করতে গেলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা রেজিস্টার্ড হতে হয়। RBI সাইটে ঢুকে যাচাই করে নিন ওই কোম্পানি স্বীকৃত কি না?
২. দেখুন এই কোম্পানি আপনার তিন সংখ্যার ক্রেডিট স্কোর বা সিবিল স্কোর চেক করছে কি না। এবং kyc বা নো ইওর কাস্টমার ফর্ম ফিলাপ করতে বলছে কি না।
৩. যাচাই করুন এই কোম্পানির কোনও পার্মানেন্ট অফিস এড্রেস রয়েছে কি না।
৪. আরও দ্রুত প্রমাণ ওই কোম্পানির ওয়েবসাইটটি সিকিওর কি না দেখে নিন আপনার ফোন বা কম্পিউটার থেকেই। বৈধ ওয়েবসাইট এড্রেসের পাশে একটা তালার চিহ্ন দেওয়া থাকে। ইউআরএল শুরু হয় https দিয়ে। http দিয়ে যে গুলো শুরু হয় সাধারণত ফ্রড হয়।
আপনি কি এমন কোনও ফ্রড লোন কোম্পানি বা অ্যাপের সন্ধান পেয়েছেন বা প্রতারিত হয়েছেন।
আপনার উত্তর যদি 'হ্যাঁ' হয়ে থাকে তাহলে ১.পুলিশের সাইবার সেল যার টোল ফ্রি নাম্বার ১৯৩০, তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট করুন।
২. RBI এর সাইটে অভিযোগ জানাতে পারেন।
৩. Google কে mail করে জানাতে পারেন।
ছবি : সংগৃহীত
Leave Comments