শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: শারদীয়া সন্ধ্যায় দলে দলে মাথা এগিয়ে চলছে নানা প্যান্ডেলে, ক্লাবে - ক্লাবে , অলিতে-গলিতে, বারোয়ারী ও সার্বজনীন পুজোর ভিড়। কিন্তু রাজবাড়ীর সাবেকি পুজোর খোলস ছেড়ে কবে থেকে আর কিভাবেই বা এলো এই বারোয়ারী পুজো ? জানেন কি ?
বাঙালির মধ্যে দুর্গাপুজো নিয়ে উন্মাদনা বরাবরই ছিল। ব্রিটিশরা এদেশে আসার আগে থেকেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে বাংলায়। শুধুমাত্র রাজা বা জমিদারদের বাড়িতেই এইসব দুর্গাপুজো হত। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা তো সবারই জানা। এইসব পুজো দেখতেও কিন্তু জল- জঙ্গল পেরিয়ে দূরদূরান্ত থেকে লোক আসত তখন। এরপর পত্তন হল কলকাতা শহরের। বসতি স্থাপন করতে থাকলেন , ব্যবসাদার রাইসরা , সাবর্ণ রায়চৌধুরী, ছাতুবাবু - লাটুবাবু, পথুড়িয়াঘাটার খেলাত ঘোষের বাড়ি, ঠাকুর পরিবার, কলকাতাকে তখন পায় কে! এইসব বাবুদের বিলাসবহুল জীবন যাত্রায় যোগ হল দুর্গোৎসব। ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব তাঁর রাজবাড়ীতে কলকাতার প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করলেন। সে এক বিশাল ব্যাপার। কলকাতার গরিব মানুষদের চোখে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিল সেই পুজো। কিন্তু এত গেল বাবুদের কথা, সাধারণ মানুষেরা তখনও অব্দি নিজেদের উদ্যোগে পুজো করবে ভাবতে পারেনি। ১৭৯০ সালে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন বন্ধু মিলে সাধারণ মানুষের থেকে চাঁদা তুলে, একচালা মূর্তি কিনে পুজো শুরু করে। এই পুজোই বারোয়ারী পুজো নামে বিখ্যাত হয়।
আজ এই বারোয়ারী পুজো আর ১২ জনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এখন কোথায় সেই একচালা ঠাকুর আর কোথায় বা সেই ডাকের সাজ , সাবেকি প্রতিমা! থিমের ছড়াছড়ি প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। প্রতিযোগিতার অদ্ভুদ স্রোতে গা ভাসিয়েছে বেশিরভাগ পুজো কমিটি। পুরষ্কার আর খ্যাতির লোভে নজর কাড়া হওয়ার জন্য, কিছুটা যেন থিমসর্বস্বই হয়ে উঠেছে আজকালকার পুজো। কার কত বড়ো প্রতিমা, কার মণ্ডপের আলো বেশি উজ্জ্বল। এইসবের মধ্যে পুজোর আনন্দটাই কেমন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ভিড় ঠিক রাখতে মহালয়ার আগেই মায়ের মুখ দর্শনের জন্য প্যান্ডেল খুলে দেওয়া হচ্ছে। পুজো আসছে আসছে এই ব্যাপারটাই বেশ উপভোগ করা যায়। মহালয়ার পর থেকে প্যান্ডেল দেখার জন্য দিনগোনা শুরু করে দেয় বাঙালি। কিন্তু সেই উন্মাদনাটা এভাবে চাপা পড়ে গেলে কিছু বছর পর থেকে এই থিমের লড়াইয়ের মধ্যেই হয়তো হারিয়ে যাবে পুজোর আনন্দ।
ছবি: সংগৃহীত
Leave Comments