শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: মহালয়ার পরদিন থেকেই পড়ে যায় দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি। বাঙালিদের যেটাই প্রথমা থেকে নবমী সেটাই অবাঙালিদের নভরাত্রি। কিন্তু নাম আলাদা হলেও দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পুজোই হয় উভ়য়ক্ষেত্রে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে দুর্গাপ্রতিমার সাথে আমরা দেখতে পাই লক্ষ্মী , গণেশ,কার্তিক ও সরস্বতীকে। বাঙালির দুধে-ভাতে কল্পনায় তাঁরা নাকি আসেন মায়ের সাথে মামাবাড়ি ঘুরতে। এই রথী মহারথীদের পাশে আরেকজন আছেন যাকে আমরা লাল-সাদা কাপড়ে অবগুন্ঠিত,লজ্জাবনত দেখি, তিনি হলেন গণেশের বউ,কলাবউ।
অনেকে ভাববেন কলা বউই যদি গণেশের বউ হয় তাহলে ঋদ্ধি - সিদ্ধি কে? ঋদ্ধি ও সিদ্ধিই গণেশের আসল বউ , কলাবউ নয়। তাহলে গণেশের ডানপাশে কেন থাকে কলাবউ? এটাই আজকের প্রতিবেদনের বিষয় আসুন জেনেনি কে এই কলাবউ?
মহাসপ্তমীর দিন কলা গাছের সঙ্গে সমূলে কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু, ধান স্নান করিয়ে নব বধূর মত নতুন শাড়ি ও সিঁদুর পরিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা হয় দুর্গাপ্রতিমার ডানপাশে। কলাগাছের সঙ্গে সাদা অপরাজিতা গাছের লতা দিয়ে এই গাছগুলো বাঁধা হলে, কলা গাছ আকৃতিতে বড়ো হওয়ায় সেটাই চোখে পরে। তাই এই নবপত্রিকা আসলে নয়টি গাছের সমষ্টি, গণেশের বউ নয়। কিন্তু কেন এই নয়টি গাছকেই বেছে নেওয়া হয়েছে? পুরাণ মতে এই নয়টি গাছেই দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ বিরাজ করে। যেমন কলা গাছে দেবী ব্রহ্মানী, কচু গাছে দেবী কালিকা, হলুদ গাছে দেবী উমা, জয়ন্তী গাছে দেবী কার্তিকী, বেল গাছে দেবী শিবা, ডালিম গাছে দেবী রক্তদন্তিকা, অশোক গাছে দেবী শকরহিতা, মানকচু গাছে দেবী চামুন্ডা এবং ধান গাছে দেবী লক্ষ্মী। সপ্তমীর আগে দেবীর চামুন্ডা রূপ পূজিত হলেও দেবীর বাকি রূপগুলো আলাদা করে পূজিত হয়না।
ছোট থেকে জেনে আসা এই কলাবউ আদতেই গণেশের বউ নয়। প্রাচীনকাল থেকে পূজিত হওয়া এই নবপত্রিকা কালক্রমে মিশে গেছে দুর্গাপুজোর বাকি নিয়মের সাথে। এর থেকেই বোঝা যায় পৃথিবীর প্রতিটা শস্যে , প্রতিটা স্থানে বিরাজ করেন মা দুর্গা। মা দুর্গার আরাধনায় আসলে আমরা আমাদের আদি মাতা পৃথিবীরই আরাধনা করে থাকি প্রতি বছর।
ছবি: সংগৃহীত
Leave Comments