দেবযানী দত্ত : ভারতের দুই মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তী। মহাভারতের তেমন একটি কাহিনী চর্চিত হচ্ছে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। সে কাহিনী আমাদের অতি পরিচিত কৌরবদের এক'শ ভাইদের কাহিনী। আমরা সবাই জানি হস্তিনাপুরের অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্র এবং রানী গান্ধারী একশত পুত্রের জনক জননী হন। কিন্ত একজন নারীর পক্ষে সত্যিই কি একশত বার গর্ভধারণ করা সম্ভব? না আদতে তা হয়ও নি! তাহলে কীভাবে জন্ম নিলেন দুর্যোধন, দুঃশাসন সহ বাকি ভাই রা? সেই কাহিনী কিন্তু কম অদ্ভুত নয়!
কথিত, যে মহামুনি ব্যাস একবার হস্তিনাপুরে এলে রানী গান্ধারী তাঁকে সেবায় তুষ্ট করেন। ঋষি তাঁকে বর দেন যে তিনি শত পুত্রের জননী হবেন। গান্ধারী গর্ভধারণ তো করলেন। কিন্ত এভাবে দু বছর কেটে গেল। তবুও প্রসবকাল এল না। অপরদিকে,প্রথম পান্ডব যুধিষ্টিরের জন্ম হলো রানী কুন্তীর গর্ভে। তাই শুনে গান্ধারী গেলেন চটে। ভাবলেন ব্যাসদেব হয়ত তাঁকে ছলনায় ভুলিয়েছেন, আদৌ কোনও বর-টর দেন নি। অধৈর্য্য হয়ে তিনি নিজেই নিজের পেটের ভিতরে থাকা ভ্রুণ কেটে বাইরে ফেলে দিলেন। এমন সময় ব্যাসদেব প্রকট হয়ে তাঁকে অভয় দিলেন যে তাঁর আশীর্বাদ কখনও মিথ্যা হয় না। সেই মাংসপিন্ড তিনি নিজে হাতে কেটে এক'শটি ভাগ করলেন। গান্ধারী অনুরোধ করলেন তাঁর একটি কন্যাসন্তানও চাই। তাই মুনি এরপর একশ একটি ভাগ করে সেই এক'শ এক টুকরোকে এক'শ একটি মাটির জারে ঘি-এর মধ্যে ডুবিয়ে রাখলেন। এবং রানীকে আরও দুই বছর ধৈর্য্য ধরতে বললেন। দুই বছর পর অবশেষে জন্ম নিলেন একে একে দুর্যোধন সহ একশত ভাই আর একটিমাত্র বোন দুঃশলা।
কিন্ত এই কাহিনী শুনতে যতই ঐন্দ্রজালিক লাগুক, যুক্তিপূর্ণ,উৎসাহী মন এর আলাদাই ব্যাখ্যা খুঁজে পায়। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে টেস্ট টিউব বেবি কনসেপ্টটির সঙ্গে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। নারী পুরুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে,শরীরের বাইরে একটি কাঁচের পরীক্ষানলে,কিছু আদৰ্শ আবহাওয়া ও পরিবেশে নির্দিষ্ট সময় রেখে দিলে সেখান থেকে জন্ম নেয় নতুন প্রাণ। আধুনিক চিকিৎসায় এই ব্যবস্থা যে কত নিঃসন্তান দম্পতির মুখে হাসি ফুটিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্ত সেই হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতে এই চিকিৎসার অস্তিত্ব কি তাহলে ছিল? অন্ততঃ যেভাবে একশ এক কৌরবের জন্ম হয়েছে তা তো এরই ইঙ্গিত দেয়! প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে টেকনোলজি, নগর ব্যবস্থা, নক্ষত্র গণনা ইত্যাদির তথ্য আধুনিক আবিষ্কারগুলিকে বার বার চ্যালেঞ্জ করেছে। সঠিক গবেষণা হয়ত কোনওদিন ছাড়িয়ে দেবে মহাভারতের এই কিংবদন্তীর জটও।
ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত
Leave Comments