শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে, বউবাজার থানার পিছনের গলি দিয়ে খানিক এগোলেই সেই আয়তকার চাতাল। লাল ইটের পাঁজর নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। যার ইট - সিমেন্টে লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘ ৮০ বছরের ইতিহাস। শোনা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আমলে আমেরিকান সৈনদের জন্যই এই ব্যারাকের পত্তন। যুদ্ধের পর খালি ব্যারাকের পুরোটাই দখল করে নেন কলকাতার এক প্রাচীণ জনগোষ্ঠী। কলকাতার বুকে এ এক অন্য কলকাতা। আয়তকার এই চাতাল আসলে ডিসুজা, ডিরোজিও, ক্রিস্টোফার অগাস্টিনের মহল্লা। এখানে ৩২টি পরিবারের বসবাস। ভারতের নাগরিকত্ব পেলেও ' অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ' তকমাটা যেন মোছেইনি তাদের গা থেকে। তাই বড়দিনে আসা অতিথিদের অনায়াসেই এড়িয়ে যান তারা।
এত গেল ইতিহাসের কথা, এবার আসি সেখানে গেলে আপনি কি কি আমেজ পেতে পারেন এই বড়দিনে। ২৫ ডিসেম্বরের আগের সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় সেই পুরনো ছবিই। বড়দিনের আগে ব্যস্ততা তুঙ্গে বো-ব্যারাকে, কথা বলার ফুরসত নেই। ঘাড় অবধি ছাঁটা কাঁচাপাকা চুল, পরনে ফুল ছাপা গাউন। কেক আর ওয়াইন বিক্রি করতে বেজায় ব্যস্ত বুড়ি মা। চাতালেই দুস্থ শিশুদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। মিডিয়া, ঘুরতে আসা পর্যটকদের এখানে আশেপাশের পাড়ার কচিকাচাদেরও ভিড় হয়। বড়দিনের আগেই ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, রং-বেরঙের বেলুন আর আলোর রোশনাই-এ সেজে ওঠে মহল্লা।প্রতি বছর এখানে ভিড় করেন শহরের মানুষ। পার্ক স্ট্রিট, সেন্ট পলস, ক্যাথিড্রালের মতোই এখন এই বো-ব্যারাকও শহুরে বাসিন্দাদের অন্যতম বড়দিনের ডেস্টিনেশন। যদিও এই মহল্লার জেন ওয়াই-এর বেশিরভাগই এখন কর্মসূত্রে বিদেশে থাকেন। তবে এই সময়ে শিকড়ের টানে ঘরে ফিরে আসেন সকলেই। লন্ডন থেকে ফেরেন কোনও ডিসুজা কিংবা মার্কিং মুলুক থেকে ঘরমুখী হন কোনও অগাস্টিন। ওদের ঘরে ফেরার আনন্দে ফের আলো ঝলমল করে ওঠে বয়সের ভারে ঝিমিয়ে পড়া বো-ব্যারাক।
বড়দিন আসার আগে থেকেই চলতে থাকে নানা কর্মকাণ্ড। এখানেই নিজের হাতে রেড ওয়াইন তৈরি করেন অনেকে। এরপর শুরু হয় বিক্রি। পাশাপাশি তালিকায় থাকে মোমো, কেকও। বিশুদ্ধ পার্সি খাবারের জন্য ভোজনরসিক মানুষরা ভিড় জমান এখানে। তবে এটি কোনও রেস্তোরাঁ নয়। দু-দিন আগে এখানকার নির্দিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করতে হয়। ওনারা মেনু পাঠিয়ে ওর্ডার নেন। তবে কলকাতার শতাধিক পার্সি ধর্মাবলম্বীদের জন্য রোজই রান্নার আয়োজন করেন কর্তৃপক্ষ। চাইলে আপনিও ঢুঁ মারতেই পারেন সেখানে।
ছবি: সংগৃহীত
Leave Comments