নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী : একে গাভাস্কার, দুইয়ে বিজয় হাজারে তিনে শচীন আর বাংলায় এক পঙ্কজ দুই সৌরভ। সারাজীবন এই ৱ্যাঙ্কিং বজায় রেখেছেন চুনী গোস্বামী। ফুটবলার চুনী গোস্বামী ১৯৬২ থেকে ১৯৭৩ অব্দি রঞ্জিতে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হ্যাঁ ঠিকই শুনলেন। তিনি এমন একজন ফুটবলার যিনি ভারতের ফুটবলের ইতিহাসে এক নম্বর ফরওয়ার্ড হওয়ার সাথে সাথেই বাংলার হয়ে দাপটের সঙ্গে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। ১৯৬২ সালে হায়দ্রাবাদে থাকাকালীন আই এফ এ এবং সি এ বি দুই জায়গা থেকেই রাজ্য দলে সুযোগ পেয়েছেন। মনে রাখবেন, ভারতের ফুটবল টিমকে ১৯৬২ সালেই জাকার্তা এশিয়ান গেমসে নেতৃত্ব দিয়ে সোনা জিতিয়ে এসেছেন। টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ার এবং ভারতের মোট ১১ টি গোলের মধ্যে ৯ টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার সম্মান জিতে সিএবি তে যোগ দিচ্ছেন! এমন আর কোনোদিনও ভারতের ইতিহাসে হবে কিনা সন্দেহ আছে। তৎকালীন সময়ে হায়দ্রাবাদে খেলা রয় গিলক্রিস্ট এর বিষাক্ত বাউন্সারের বিপক্ষে তার হেলমেটহীন অবস্থায় লড়াকু ফলোয়ান বাঁচানো ৪১ এবং দুটো উইকেট, কিংবা ১৯৬৬ তে স্যার গ্যারি সোবার্স এর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তার ৭ উইকেট এবং ৪০ গজ দৌড়ে হলের ক্যাচ, যা ম্যাচটাও জিতিয়েছিল! তাঁর নেতৃত্বে ভারত রঞ্জি ফাইনাল খেলেছিল দুই বার। ১৯৭১-৭২ মরসুমে বাংলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুবিমল ওরফে চুনী গোস্বামী। সেবার বাংলা বনাম মুম্বাই ফাইনাল হয় ইডেন গার্ডেনে।ম্যাচের আগে চিন্তিত চুনী টাইগার পতৌদির কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। টাইগারের শীতল অভিব্যক্তি চুনীর হৃদয় ভেঙে দেয়।এরপর হাই-হ্যালো বাদ দিয়ে তাদের সম্পর্কের আর উন্নতি হয়নি। বাংলার কাঁটা ছিল গাভাস্কার, এবং এই গাভাস্কারই ১৫৭ রান করে ম্যাচ বের করে নিয়ে যান। চুনীর রান ছিল শূন্য এবং পাঁচ! মুম্বাইতে আরেকটি ফাইনাল খেলে তার রান দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৯৬ এবং ৮৪, যা আজও বাংলার ক্রিকেটে রেকর্ড।মোহনবাগানের হয়ে ফুটবল খেলার পাশাপাশি হকিও খেলতেন! সাউথ ক্লাবে টেনিস খেলতেন, হয়ত দেখা যাবে ব্যাঙ্কের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও সর্বভারতীয় স্তরে ৱ্যাঙ্ক করতেন। এমন অলরাউন্ডার ভারতে বিরল তো বটেই, পৃথিবীর ইতিহাসেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চুনী মোহনবাগানের হয়ে মোট ২৫৮ গোল করেছেন যা রেকর্ড! তাঁর অধিনায়কত্বে ভারতীয় ফুটবল দল ১৫ টি ম্যাচের মধ্যে ১১ টিতে জিতেছে। ৬২ এর এশিয়ান গেমসে সোনা, এছাড়া ৬৪ এর মার্ডেকায় রুপো, ৬৪ এর এশিয়ান কাপে রুপো, টটেনহ্যাম হটস্পর থেকে ডাক পাওয়া এবং প্রত্যাখ্যান কারণ মোহনবাগান ছেড়ে যাবেন না! এই সমস্ত কিছুই তাঁকে ভারত সেরার আসনে চিরকালের জন্য প্রতিষ্ঠিত করেছে।কোনো পরিস্থিতিতেই হার না মানা মনোভাব,ভিড় ছেড়ে একা থাকার রাজকীয় ঔদাসিন্য, বিস্ময়কর প্রতিভা, ষ্টারসুলভ জনপ্রিয়তা, প্রকৃত অলরাউন্ড ক্ষমতা, এতোসমস্ত গুণ এবং যশ একসাথে একজন খেলোয়াড়ের মধ্যে বোধহয় পাওয়া যায় না। তার খেলা ছাড়ার পর আজ পর্যন্ত এমন কোনো খেলোয়াড়কে দেখে মনে হয়নি সে চুনী গোস্বামীর সর্বভারতীয় খ্যাতি অর্জন করতে পারবে এবং তাঁর রেকর্ড ভাঙতে পারবে! তাঁর গতিতে ড্রিবল করার দক্ষতার চেয়ে দাঁড়িয়ে ড্রিবল করার ক্ষমতাই তাঁকে ভারতের সর্বকালের সেরা ড্রিবলার বানিয়েছে। দুর্ধর্ষ ডিফেন্ডার জার্নেল সিং যাকে আর্টিস্ট বলছেন। কঠিন চরিত্রের রহিম সাহেবও যাকে সমঝে চলতেন সেই চুনী গোস্বামীর আজ ৮৬ তম জন্মবার্ষিকী।
ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
Leave Comments