কোনওটা অ্যান্টাসিড, কোনওটা ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট। তালিকায় রয়েছে বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধও। ড্রাগ টেস্ট বা গুণমানের পরীক্ষায় ডাহা ফেল করল এমনই ৫৩টি ব্র্যান্ড। এর মধ্যে এমন ওষুধ রয়েছে, যা আম জনতার মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। পেটের রোগের জন্য রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে খাওয়া প্যান-ডি, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত ক্লেভাম-৬২৫, কিংবা সাধারণ জ্বরজারি ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট আইপি ৫০০— সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্স কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) জানাচ্ছে, এই ওষুধগুলি পাশ করেনি গুণমানের পরীক্ষায়।
বাজার চলতি ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে সিডিএসসিও। প্রতি মাসে বিভিন্ন ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালান বিভিন্ন রাজ্যের ড্রাগ অফিসাররা। কোনও ওষুধ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে সতর্কবার্তা জারি করে সিডিএসসিও। নমুনা পরীক্ষার পর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আগস্ট মাসের ‘নট অব স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি’ তালিকা। এবার মানের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ওষুধের দু’টি তালিকা প্রকাশ করেছে সিডিএসসিও। প্রথম তালিকায় আছে ৪৮টি পরিচিত ওষুধের নাম। দ্বিতীয় তালিকায় আরও পাঁচটি। সেইসঙ্গে যে কোম্পানিগুলির ওষুধ পরীক্ষায় মুখ থুবড়ে পড়েছে তাদের বক্তব্যও জায়গা পেয়েছে সেখানে। আর তা ঘিরে হইহই পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। কারণ, তালিকায় থাকা ব্র্যান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় ওষুধ কোম্পানির নাম। তার মধ্যে একটি আবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তাই বিতর্ক বাড়ছে। গ্যাসের সমস্যায় বহু ডাক্তারই প্যান-ডি খাওয়ার পরামর্শ দেন। আবার গুণমান পরীক্ষায় ফেল করার তালিকায় আছে কেপোডেম এক্সপি ৫০ ড্রাই সাসপেনশনও। শিশুদের গলা, ফুসফুস, মূত্রনালী ও অন্যান্য স্থানে গুরুতর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রুখতে এই ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। এটিও পরীক্ষা করা হয় কলকাতার ল্যাবে। এছাড়াও রয়েছে পেটের ইনফেকশনের ওষুধ মেট্রোনিডাজোলস, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট শেলক্যাল, অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধ গ্লিমপিরাইড এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ টেলমিসার্টেন।
যদিও কোম্পানিগুলির বক্তব্য, যে সমস্ত ব্যাচের ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেগুলি ‘জাল’ (spurious) এবং তারা তৈরি করেনি। এই বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন এক প্রথম সারির ওষুধ সংস্থার মুখপাত্র।
এই খবরে অবশ্য তোলপাড় পড়ে গিয়েছে সব মহলে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট সঠিক হলে, বহু ওষুধই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন তালিকা থেকে বাদ চলে যাবে। এবং যেহেতু এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ওষুধে আম জনতা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে এসেছে, ভরসাস্থলে ধাক্কা লাগবেই। আর যদি ওষুধ কোম্পানিগুলির বক্তব্য ঠিক হয়, তাহলে বুঝতে হবে বাজারে এই জনপ্রিয় ওষুধগুলিরও জাল ভার্সান ছড়িয়ে গিয়েছে। এই প্রবণতা আরও ভয়াবহ।
Leave Comments