শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: প্রতিবেদনে গৌরব ব্যানার্জি: "চাকরি? তা চাকরি পেলে তোর কি দোষ হবে জানিস তো?"
"I will be a cog wheel in the bureaucratic machine"
"এজন্যই তো খারাপ লাগে! তুই যা করছিস তা জেনে শুনেই করছিস!"
সত্যজিৎ রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমার এই অমর লাইনগুলি পাঠকের মনে পড়ে? এলোমেলো চুল, সদ্য গজানো দাড়ি, বছর ১৭-১৮র বিদ্রোহী যুবক। সিদ্ধার্থের ছোট ভাই, 'টুনু'। সেই 'টুনু'র চরিত্রের জন্যই সত্যজিৎ রায়ে বেছে নিয়েছিলেন তাঁকে। তারপরেও অসংখ্য ছবিতে সত্তরের দশকের আন্দোলনের মুখ হিসেবে দেখা গিয়েছে তাকে। সেটা মৃণাল সেনের কলকাতা ৭১ হোক বা অন্য কোন ছবি।
বাংলা সিনেমায় প্রথম "রাজা রায়চৌধুরী" অথবা সর্বজনবিদিত "কাকাবাবুর" চরিত্রের জন্যও তপন সিনহা বেছে নিয়েছিলেন তাকেই। বৃহস্পতিবার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সেই প্রবাদ প্রতিম অভিনেতা দেবরাজ রায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন।
সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবি দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্র জগতে পথ চলা শুরু। এরপর তিনি নজর কাড়েন মৃণাল সেনের 'কলকাতা 71' ছবিতে। তারপর 'মর্জিনা আবদুল্লা' ছবিতে মিঠু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় আজও মন কাড়ে বাঙালির ৷ সংবাদপাঠ, শ্রুতি নাটক সবেতেই ছিল তাঁর অসামান্য দক্ষতা। সাম্প্রতিককালে অভিনেতার কাজ দেখা না-গেলেও তাঁর চলে যাওয়ায় বিনোদন দুনিয়ায় নক্ষত্রপতন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিনেমার পাশাপাশি মঞ্চেও অভিনয় করেছেন তিনি। দূরদর্শনের সংবাদপাঠক হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। 1976 সালে তিনি বিয়ে করেন অনুরাধা রায়কে। তিনিও জনপ্রিয় অভিনেত্রী। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন বিনোদন থেকে দূরে ছিলেন দেবরাজ । তাঁর কেরিয়ার শুরু হয়েছিল দূরদর্শন থেকেই ৷ সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেন ছাড়াও তিনি তরুণ মজুমদার, বিভূতি লাহা, তপন সিনহার মতো বিখ্যাত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সিনেমা-দূরদর্শন-নাটক-রেডিয়োয় অতি পরিচিত মুখ ছিলেন দেবরাজ রায়। দেবরাজ রায় দূরদর্শনে দীর্ঘদিন সংবাদ পাঠ করেছে তাঁর স্ত্রী অনুরাধা রায়ও সিনেমায় বিখ্যাত মুখ। ‘আমি চাই ওর শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হোক।’একরাশ মন খারাপ নিয়ে জানালেন অভিনেত্রী অনুরাধা রায়।
শুক্রবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে পরিবারের তরফে। আপাতত হাসপাতালেই রয়েছে তাঁর মরদেহ। সেখান থেকেই আগামীকাল, শুক্রবার ১৮ অক্টোবর প্রথমে তাঁর সল্টলেকের বাসভবন নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর দেহ, তারপর সেখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য শেষ বিদায় জানানো হবে অভিনেতাকে। দেবরাজ রায়ের প্রয়াণে নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর স্ত্রী অনুরাধা রায়ের কথায়, “সন্ধেবেলা দেবরাজ চলে গেল। গত মাস দেড়েক ধরে একটু বেশিই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ও। ২০১৭ সালে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। তার পর থেকে যে একেবারে সুস্থ হয়ে গিয়েছিল তা বলা যায় না। গত ২১ তারিখে আচমকাই পড়ে গিয়েছিলে। যার ফলে ফিমার বোন ভেঙে যায়। অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। তার পরেই ওর শরীরটা আরও ভেঙে যায়। মাঝে খুব জ্বর হয়েছিল। তখনই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। গত দেড় মাসে পাঁচ বার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল ওকে। অনেক ভাবে চেষ্টা করে হয়েছে। কিন্তু শরীরের আর কিছু নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। কিডনি কাজ করাও বন্ধ করে দিয়েছিল। ও বেঁচে থাকতে তো সে ভাবে স্বীকৃতি পেল না। আমি চাই ওর চলে যাওয়ার সংবাদ যেন সকলের কাছে পৌঁছায়।” আপাতত হাসপাতালেই রাখা হয়েছে দেবরাজকে। শুক্রবার সম্পন্ন হবে তাঁর শেষকৃত্য।
Leave Comments