• India
  • Last Update 11.30 am
  • 29℃ Kolkata, India
news-details
Entertainment

আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত বাংলার প্রথম অভিনেত্রী তিনি! কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে নিয়ে যেতে পারলেন না সম্মানটুকুও!

ad

শীর্ষ টাইমস ডেস্ক: সত্যজিৎ রায়ের নিজের কথায়, উত্তমকুমার না থাকলে যেমন "নায়ক" সিনেমা হতো না, তেমনি চুনিবালা দেবী না থাকলে "পথের পাঁচালী" করা সম্ভব হত না। সত্যজিৎ রায়ের "পথের পাঁচালী"-র ইন্দির ঠাকরুন এর ভূমিকায় অভিনেত্রী "চুনীবালা দেবী" - হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্না প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী। এ খবর সম্ভবত আমরা খুব কম জনই রাখি! সেই চুনীবালা দেবীকে নিয়ে অনেকের কাছে কিছু অজানা খবর রইলো আজ আপনাদের প্রতিবেদনে।

 

সত্যজিৎ রায় তখন "পথের পাঁচালী" সিনেমার হরিহর, সর্বজায়া, অপু, দুর্গা সব চরিত্রের অভিনেতা - অভিনেত্রী পেয়ে গেছেন কিন্ত ইন্দির ঠাকরুন চরিত্রের অভিনেত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ওই রকম একজন বৃদ্ধা অভিনেত্রী না পেলে যে এ সিনেমা করাই যাবে না! অবশেষে সন্ধান মিলল ঠাকরুনের। পাইকপাড়ায় থাকেন এক বৃদ্ধা, বয়স আশি। নাম তার চুনীবালা দেবী। বহুদিন আগে একটি সিনেমার ছোট্ট একটি দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন চুনীবালা। সত্যজিৎ রায় তার এক মন্তব্যে বলেছেন, তখন চুনীবালা দেবীর বয়েস আশি পেরিয়ে গেছে। তোবড়ানো গাল, দেহের চামড়া ঝুলে পড়েছে। ঠিক যেমনটি সত্যজিৎ ভেবেছিলেন এই চরিত্রটিকে ঠিক তেমনি। এক সকালে সত্যজিৎ হাজির হলেন চুনীবালা দেবীর বস্তির বাড়ীতে। সত্যজিৎ একটা মোড়ায় মুখোমুখি বসলেন ওনার সামনে। কথায় কথায় সত্যজিৎ জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি পথের পাঁচালী পড়েছেন?" বৃদ্ধা চুনীবালা বললেন, "হ্যাঁ পড়েছি বাবা।" সত্যজিৎ রায় বলেন, "সিনেমায় ইন্দির ঠাকরুন করতে পারবেন?" চুনীবালা দেবী ফোঁকলা দাঁত বার করে হেসে বললেন, "তা তোমরা একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিলে পারবো বই কি বাবা!" সত্যজিৎ বুঝে গেলেন ইন্দির ঠাকরুন পেয়ে গেছেন। কিন্তু কলকাতা থেকে বড়াল গ্রামে প্রতিদিন শুটিং- এ যাওয়ার ধকল এই বয়েসে নিতে পারবেন কিনা জিজ্ঞাসা করাতে চুনীবালা বললেন, "খুব পারবো। তোমরা এত কষ্ট করে বই করছো, ওটুকু কষ্ট আমি ঠিক করতে পারবো।" ওনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রতিদিন কত টাকা পারিশ্রমিক নেবেন। উনি বলেছিলেন "দিনে দশ টাকা দিও।" সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, "আপনাকে প্রতিদিন কুড়ি টাকা দেওয়া হবে।"

 

এরপর শুটিং শুরু হল। প্রতিদিন সকালবেলায় ট্যাক্সি করে চুনীবালাকে শুটিং স্পটে নিয়ে যাওয়া হত, আবার সন্ধ্যেবেলায় ট্যাক্সি করে ফিরিয়ে দেওয়া হত বাড়িতে। শুটিং - এর সত্যজিৎ রায় একদিন চুনীবালাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি ধর্মমূলক গান গাইতে পারবেন?" চুনীবালা উত্তরে বললেন, "পারবো।" পথের পাঁচালীতে চুনীবালা চাঁদনি রাতে দাওয়ায় বসে হাততালি দিয়ে গাইছেন সেই গান "হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো, পার করো আমারে"। সেই খালি গলায় গান শুনে সত্যজিৎ রায় একেবারে মুগ্ধ! ছবিতে খালি গলায় সেই গানই গাইলেন চুনীবালা। এক অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে সেই গান পথের পাঁচালী ছবিকে এক অন্য জগতে পৌঁছে দিলেন তিনি।

 এবার আসল চমক এলো! পথের পাঁচালী মুক্তির পর ম্যানিলা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আন্তর্জাতিক সম্মানের পুরস্কারে সম্মানিতা অভিনেত্রী হিসেবে, চুনীবালা দেবী হলেন সেই সম্মানের অধিকারী। ভারতীয় অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিতা অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। এক বিরল সম্মানের অধিকারিনী। অনেকেই সম্ভবত এ খবর জানেন না। কিন্তু এই পুরস্কার তিনি গ্রহণ করতে ম্যানিলায় যেতে পারেননি কারণ তার আগেই তিনি বিদায় নিয়েছিলেন পৃথিবী থেকে। কিন্তু ছবি মুক্তির আগেই সত্যজিৎ রায় স্বয়ং তার বাড়িতে গিয়ে ওই ছবি পুরো দেখিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি এও দেখে যেতে পারেননি যে তার সেই খালি গলায় গাওয়া গান রয়েছে ওই ছবিতে।

 

ছবি: সংগৃহীত 

You can share this post!

Leave Comments